রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বছরজুড়ে নানা রূপে সেজে থাকে। সব সময় দেশীয় আর পরিযায়ী পাখির কলতানে মুখরিত থাকে পুরাে ক্যাম্পাস। তবে নানা প্রজাতির পাখির কলকাকলিতে মুখরিত থাকা রাবি ক্যাম্পাস যেন তার চিরচেনা রূপ হারাতে বসেছে। এক বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে দেখা নেই পরিযায়ী পাখির, অন্যদিকে দেশীয় পাখির আনাগােনাও কমে গেছে। ফলে হারিয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন সকালে পাখির কলতানে ঘুম থেকে ওঠা আর সন্ধ্যায় কিচিরমিচির শব্দে রুমে ফেরার সকাল-সন্ধ্যাগুলাে।

ক্যাম্পাসে দিনে দিনে পাখিদের আনাগােনা কমে যাওয়ার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়টির ‘পাখি কলােনি’তে আগের মতাে পাখিরা থাকছে না দেখে মর্মাহত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এর পেছনে ক্যাম্পাসে পাখিদের আশ্রয়স্থলের বৃক্ষনিধন এবং পুকুর ভরাট করে প্রশাসনের ‘ভুল’ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে দায়ী করছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছাত্রী হলের মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গাটিতে বছরজুড়েই অবস্থান করত অসংখ্য প্রজাতির দেশীয় পাখি। এখানে আবাসস্থল গড়ে তােলা পাখিদের মধ্যে ছিল পানকৌড়ি, বড় পানকৌড়ি, শালিক, বুলবুল, কালাে বুলবুল, মাছরাঙ্গা, ডাহুক, কাঠ-ঠোকরা শালিক, বামুন শালিক, গােবরে শালিক, পাতি কাক, টিয়াসহ অনেক প্রজাতির পাখি। আবার বাজকা, নিশিবক, গাে-বকসহ অনেক প্রজাতির বকের বাস ছিল এখানে।

ফলে ২০০৯ সালে এই এলাকাটিকে ‘পাখি কলােনি হিসেবেও ঘােষণা করা হয়। অসংখ্য গাছপালা ও ঝােপঝাড় বিস্তৃত এই জায়গাটি হয়ে ওঠে পাখির অভয়াশ্রম। তবে পাশেই উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলায় গত এক বছর ধরে সেই পাখি কলােনিটি কিচিরমিচির শব্দে আর মুখরিত নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযােগাযােগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযােগী অধ্যাপক আবদুল্লাহ-আল-মামুন বলেন, ‘আমি খেয়াল করেছি গত এক বছর ধরে রাবিতে আশ্রয় নেওয়া দেশীয় পাখিদের সংখ্যা কমে যাওয়ার পাশাপাশি অতিথি পাখিরাও আসছে না। এতে ক্যাম্পাসে জীববৈচিত্র্য কমে গেছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকৃতির সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রেখে যে অবকাঠামােগত উন্নয়ন করা দরকার, সেটা। করা হচ্ছে না।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বলেন, পাখিরা মূলত যে জায়গায় খাদ্য এবং নিরাপদ আশ্রয় পায় সেখানেই কলােনি গড়ে তােলে। বর্তমানে কলােনি-সংলগ্ন জলাশয়টি ভরাট করে হল নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে হলের নির্মাণ কাজের শব্দের ফলে পাখি তাে দুরের কথা সেখানে হলের শিক্ষার্থীদের থাকাটাই কষ্টসাধ্য হয়ে দাড়িয়েছে। প্রচণ্ড শব্দ দূষণ আর পর্যাপ্ত খাবারের অভাবে সেখানে পাখিরা আর কলােনি করতে পারছে না। ক্যাম্পাসে এদের নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা দরকার ব্যাবস্থা করা দরকার।

উপাচার্য অধ্যাপক গােলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, ক্যাম্পাসে পাখিদের নিরাপদ আশ্রয়ের বিষয়টি আমি ব্যক্তিগতভাবে অনুধাবন করেছি। এরই মধ্যে এ বিষয়ে পাখি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বােটানিক্যাল গার্ডেনসহ ক্যাম্পাসের আরও কয়েকটি অঞ্চলকে পাখিদের জন্য অভয়ারণ্য করে দেওয়ার চেষ্টা করছি।

ভালো লাগলে কিন্তু ফেসবুক পেজ এ লাইক দিতে ভুলে জাবেন না।
আরো তথ্য পেতে ভিজিট করুন.