বিস্তারিতঃ
হার্ট ব্লক সচরাচর ব্যবহৃত একটি কথা। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় হার্টের রক্তনালিতে প্রতিবন্ধকতা বা বাধা সৃষ্টি হওয়াকে হার্টে রক্তনালির ব্লক বলা হয়। হার্ট তার ভিতরে থাকা রক্ত থেকে সরাসরি অক্সিজেন ও রসদ গ্রহণ করতে পারে না যেমন- পেট্রল। পরিবাহী ট্রাংকারের টেং এ থাকা পেট্রল গ্রহণ করে তার ইঞ্জিন চালাতে পারে না, ইঞ্জিন চালানাের জন্য আলাদাভাবে ইঞ্জিনে পেট্রল সরবরাহ করতে হয়। হার্টের বেলায়ও তেমনি ঘটে থাকে। হার্ট তার নিজস্ব রক্তনালির মাধ্যমে রক্ত সরবরাহ পেয়ে থাকে। এসব রক্তনালিকে করােনারি আর্টারি বা হার্টের রক্তনালি বলা হয়ে থাকে।

করােনারি রক্তনালি শাখাপ্রশাখায় বিভক্ত হতে হতে খুবই সূক্ষ্ম রক্তনালিতে পরিণত হয়, যাকে কেপিলারি রক্তনালি বলা হয়। যা এতই চিকন যে খালি চোখে তাদের দেখা সম্ভব নয়, কেবল অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যেই তাদের দেখা যেতে পারে। কেপিলারি ছাড়া অন্য যেসব বড় সাইজের রক্তনালি শরীরে বিদ্যমান থাকে তারা শুধু কেপিলারিতে রক্ত সরবরাহ করতে পারে কিন্তু কোনাে রূপ অক্সিজেন, রসদ ও বর্জ্য আদান প্রদান করতে পারে না। তাই বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনের মতাে রক্তনালিগুলােও গ্রিড লাইন ও সাপ্লাই লাইনের মতাে কাজ করে।

এখানে কেপিলারিগুলাে ডিস্ট্রিবিউশন বা সাপ্লাই লাইনের মতাে এবং অন্য সব রক্তনালি গ্রিড লাইনের মতাে। কাজ করে থাকে। রক্তনালিতে ভিতরের দিকে বিভিন্ন স্থানে ময়লা বা আবর্জনার মতাে বস্তু জমা হয়ে রক্ত প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে, যাকে রক্তনালির ব্লক বলে আখ্যায়িত করা হয়। এ ধরনের ব্লক সাধারণত বড় ও মাঝারি সাইজের রক্তনালিতে দেখা যায়।
করােনারি আর্টারি বা হার্টের রক্তনালিতে এক ধরনের বস্তু স্তুপাকারে জমা হয়ে রক্ত চলাচলের পথকে সরু
বা চিকন করে ফেলার জন্য রক্তনালির সেসব স্থানে রক্ত প্রবাহের স্বল্পতা দেখা দেয়।

এর ফলে ব্লকের পরবর্তী স্থানে বা ব্লকের ভাটি এলাকার রক্ত সরবরাহের পরিমাণ কমিয়ে দেয়, ফলশ্রুতিতে হার্টের সে অংশ বা এলাকার রক্ত সরবরাহের কমতিকে ইসকেমিয়া বলা হয় এবং ব্লকজনিত অসুস্থতাকে ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ বলা হয়ে থাকে। যা অক্সিজেন ঘাটতিজনিত অবস্থা এবং ওইসব অংশ বা এলাকার অক্সিজেন ও রসদের অভাবে হার্টের মাংসপেশি ঠিকমতাে কাজ করতে পারে না এবং এর লক্ষণ হিসেবে বুকে ব্যথা, বুকে চাপ, জ্বালা ও স্বাসকষ্টের মতাে অবস্থার সৃষ্টি হয় এবং গুরুতর অবস্থায় হার্ট ঠিকমতাে কাজ করতে পারে না।

আমরা অনেকেই জানি যে, হার্ট সারা জীবন রক্ত পাপ করে সারা শরীরে রক্ত সরবরাহ নিশ্চিত করে থাকে। এ ক্ষেত্রে রক্ত কম পরিমাণে পাম্প করার চলে সারা শরীরের রক্ত সরবরাহ কমে যায়। ব্যাস তার স্বাভাবিক কর্ম সম্পাদনে অপারগ হয়ে পড়ে।

কী কী কারণে রক্তনালিতে ব্লকের সৃষ্টি হয়ঃ
বক সষ্টি হওয়ার কারণ এখনাে সম্পূর্ণভাবে জানা সম্ভব হয়নি, তবে এখন পর্যন্ত যে সব কারণকে ব্লকের জন্য দায়ী করা হয়, সেগুলাে হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি ডায়াবেটিস, রক্তে কোলেস্টেরল জাতীয় উপাদান বেশি থাকা, যা ব্লক সৃষ্টির একটি উপাদানও বটে, উচ্চরক্তচাপে যারা দীর্ঘদিন যাবৎ ভুগছেন তাদেরও ব্লক সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি, যারা ধূমপান করেন বা তামাক জাতীয় বস্তু গ্রহণ করেন, তাদের মধ্যেও ব্লকের প্রবণতা বেশি পরিলক্ষিত হয়, যারা কায়িকশ্রম থেকে বিরত থাকেন বা অলস জীবনযাপন।

করেন তারাও অধিকহারে এই রােগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। যারা প্রায় সময়ই টেনশন বা উদ্বিগ্নতায়। ভােগেন তাদের ক্ষেত্রেও স্ট্রেস হরমােন। বেশি বেশি নির্গত হয়ে ব্লক সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। এসব ব্যক্তির স্ট্রেস হরমােনের প্রভাবে উচ্চরক্তচাপ বা হাইপ্রেসার হতে দেখা যায়। বংশগত প্রবণতা হিসেবেও অনেককে ব্লক জাতীয় অসুস্থতায় আক্রান্ত হতে দেখা যায়। এখানে উল্লেখ্য, রক্তনালির ভিতর দিকে স্তুপাকারে চর্বি জাতীয় বস্তু খুবই ধীরে ধীরে অল্প অল্প করে জমা হতে হতে তাৎপর্যপূর্ণ।

ব্লক সৃষ্টি হতে অনেক বছর সময় লেগে যায়। যার। জন্য অল্পবয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ ব্লক। সৃষ্টি হতে সাধারণত খুব একটা বেশি দেখা যায় না, তবে বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এ রােগের প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। যার জন্য এ ধরনের অসুস্থতাকে বয়স্ক ব্যক্তিদের অসুস্থতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। হার্ট ব্লককে জীবনধারাজনিত অসুস্থতা হিসেবেও বিবেচন করা হয়, যেমন- অত্যধিক চর্বিজাতীয় খাদ্য গ্রহণ। করা, ভেজালযুক্ত খাদ্য খাওয়া, দীর্ঘসময় ধরে সংরক্ষিত খাদ্য গ্রহণ করা। অতিমাত্রায় শর্করা জাত খাদ্য গ্রহণ করা, বয়স অনুপাতে কায়িকশ্রম বা পরিশ্রম না করা, অতিমাত্রায় চিনি ও লবণ গ্রহণ করা ইত্যাদি। তাই এ বিষয়ে সচেতন হােন।

ভালো লাগলে কিন্তু ফেসবুক পেজ এ লাইক দিতে ভুলে জাবেন না।
আরো তথ্য পেতে ভিজিট করুন.