বিস্তারিতঃ
বিশ্বব্যাপী চলছে জ্বালানি সংকট। এ নতুন কোনাে বিষয় নয়। সম্প্রতি কেবল তীব্রতর হয়েছে। এর প্রভাবে নানা সংকট দেখা দিয়েছে বিশ্বব্যাপী। গভীরতা ও জটিলতার দিক থেকে নিকট-অতীতে এত বড় জ্বালানি সংকট দেখেনি বিশ্ব। যার বাইরে নয় বাংলাদেশও। এদিকে বিশ্বে জ্বালানি-বিদ্যুৎ নিয়ে সংকট সহসা কাটার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তবে বাংলাদেশে সংকট কমবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। কিন্তু অন্যান্য সূত্র বলছেন, এ আশ্বাসে বিশ্বাস করা কঠিন। এর পরও আমরা আশাবাদী হতে চাই যে সংকট কমবে।

তবে সংকট কমা মানে নিশ্চয়ই দূর হয়ে যাওয়া নয়। বরং আশঙ্কা আছে নানা রকমের অদূর ভবিষ্যতে বৈশ্বিক জ্বালানি পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। কেউ কেউ বলছেন, সবচেয়ে খারাপ অবস্থা হয়তাে এখনাে আসেনি। এ নিয়ে বাংলাদেশে নানা ধরনের উদ্বেগ আছে। এ উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে পিডিবির তারল্য সংকটের খবর। দেশে চলমান বিদ্যুৎ সংকটের জন্য বিশ্ববাজারে তেল ও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) চড়া দামকে দায়ী করছে সরকার। এদিকে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে চলমান সংকটের প্রধান কারণ আমদানি নির্ভরতা এবং এ খাতে মাফিয়া অনুপ্রবেশ।

ফলে যে সংকট তৈরি হয়েছে তার দায় চুড়ান্ত বিচারে সরকারকেই নিতে হবে- এমন বক্তব্য অনেকেরই। চলমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিক ভাবে আবার লােডশেডিং যুগে ফিরেছে ১৯ জুলাই। গােপনে নয়, জানান দিয়েই। তবে ঘােষিত সময়ের অতিরিক্ত লােডশেডিং করা হচ্ছে। এ আসলে চলমান বাস্তবতা। আর এখানেই শেষ নয়। এ ব্যাপারে সপ্তাহখানেকের মধ্যে পুনরায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তবে লােডশেডিংয়ের সময়সীমা নিয়ে সিদ্ধান্ত যা-ই হােক, হাফ ছেড়ে বাঁচার মতাে স্বস্তির কোনাে বার্তা নিয়ে আসবে না, তা সহজেই বােধগম্য। দেশি ও আন্তর্জাতিক কারণে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সমস্যা অনেক গভীরে চলে গেছে। অতএব সংকট থেকে সহসা মুক্তির আশা বাস্তব সম্মত নয়।

এদিকে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ প্রাপ্তিতে আমাদের এক ধরনের অভ্যস্ততা সৃষ্টি হয়েছে। অর্থনীতিতে আমরা অনেক এগিয়েছি। তার মানে এই নয়, আমরা সিঙ্গাপুর-মালয়েশিয়া হয়ে গেছি। শুধু তাই নয়, আমরা এক ধরনের বিভ্রমের মধ্যেও আছি। কিন্তু। বাস্তবতা হচ্ছে, এখন আমাদের সুন্নত রক্ষা করতে গেলে ফরজ খেলাপ হয়ে যাওয়ার অবস্থা। তবে আশা করা যাচ্ছে সরকার ও জনগণ বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের কঠিন বাস্তবতা কিছুটা হলেও উপলব্ধি করতে পেরেছে। মােদ্দা কথা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে আমরা সংকটে আছি। অথচ বিগত কয়েক বছরের সাফল্য এবং অতি প্রচারণায় তিলকে তাল ভাবায় একরকম ধারণা সৃষ্টি হয়েছে, বাংলাদেশে রয়েছে বানের পানির মতাে বিদ্যৎ এ হচ্ছে।

অতি প্রচারণার বিভ্রম এর আগে যেমন প্রচারণা ছিল, গ্যাসের ওপর ভাসছে বাংলাদেশ। কিন্তু বাস্তবতা তা নয়। আর এও সঠিক নয়, লােডশেডিং জাদুঘরে গেছে। বিদ্যুৎ প্রসঙ্গে বাস্তবতার বিপরীতে দাড়িয়ে যেসব কথা বলা হয়েছে। তাতে এখন অনেকেই বলছেন, এত বিদ্যুৎ তাহলে গেল কোথায়? আসলে বিদ্যুৎ কোথাও যায়নি। আমাদের জাতীয় উৎপাদন সক্ষমতা সত্যিই ২৫ হাজার মেগাওয়াট। তার মানে চাইলে বাংলাদেশ দিনে ২৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবে। এ উৎপাদন সক্ষমতার প্রচারণা, আর ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌছে দেওয়ার আষাঢ়ে গল্পে আমরা মােহাবিষ্ট হওয়ার কারণে এক ধারণা জেঁকে বসেছিল, বিদ্যুৎ মানে ছেলের হাতের মােয়া।

এ ছিল সাধারণের ধারণা। আর অগ্রগামী শ্রেণি ভেবেছে, আলাের পথের যাত্রী আমরা! আমাদের অন্ধকারে আর কখনাে ফিরতে হবে না। আর হারিকেন-কুপি-মােমবাতি-হ্যাজাক লাইট পেরিয়ে আসা লজ্জার স্মৃতি। এ হচ্ছে অতি প্রচারণার অকল্যাণ। পাশাপাশি জীবনযাপনে এমনভাবে অভ্যস্ত হওয়ার দিকে আমরা দ্রুত হাঁটতে শুরু করেছিলাম যাতে প্রধান নির্ভরতা হচ্ছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি। হােক মাছবাজার অথবা বাসাবাড়ি, অফিস, মুদি দোকান, অথবা শপিং মল বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়ে পড়ল সেই প্রবচনের মতাে, ‘সরকারকা মাল দরিয়া মে ঢাল। কিন্তু বাস্তবতা মােটেই এমন নয়। গ্রাহক-প্রদত্ত টাকাকেই বিদ্যুতের মূল্য ভেবে বসল সবাই।

বিবেচনায় নেওয়া হয় না, সােনার দামে ডলার কিনে জলের দামে টাকায় গ্রাহককে দেওয়ার মতাে ধারা চলছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে। এর পরও এ নিয়ে অসন্তোষের অন্ত নেই। যার প্রকাশ ঘটছে কয়েকদিনের লােডশেডিংয়েই। অথচ এমনও সময় ছিল যখন দেশবাসীকে দিনে-রাতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১০-১২ ঘণ্টা লােডশেডিংয়ের যন্ত্রণা সইতে হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত সরকারের ২০০১-২০০৬ আমলের তুলনায় এখনকার আগাম ঘােষণায় দিনে-রাতে ২-১ ঘণ্টার লােডশেডিং সহনীয়ই হওয়ার কথা। কেননা বর্তমান বিশ্ববাস্তবতায় সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হলে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে কুলাবে না।

সে ক্ষেত্রে কেরােসিন ছাড়াই হাতে হারিকেন চলে আসার আশঙ্কা রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের সংকট উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং এ সংকট আরও বাড়তে পারে। ফলে অতীতের যে কোনাে সময়ের চেয়ে বাংলাদেশকে এখন অধিকতর সতর্ক ও সাহসী পদক্ষেপ নিতে হবে। হতে হবে সাশ্রয়ী ও মিতব্যয়ী। গভীরভাবে বিবেচনায় নেওয়া প্রয়ােজন বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণের আগে প্রধান প্রয়ােজন হচ্ছে প্রাথমিক জ্বালানি। যার পুরােটাই আমদা নিনির্ভর। নিজের গ্যাস অনুসন্ধান ও কয়লা উত্তোলন না করে আমরা মেতে ছিলাম আমদানির তাণ্ডবে৷ কেন? এ নিশ্চয়ই রহস্যজনক। এদিকে বাংলাদেশের বর্তমান সাবিক সমস্যার তীব্রতা কেবল আমাদের কারণে নয়, এটা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অনিবার্য প্রভাব।

সঙ্গে অন্যরকম খেলাও আছে। যার বিরূপ প্রভাব কেবল বাংলাদেশে নয়, সারা বিশ্বেই পড়েছে। ফলে জালানির দাম আকাশ ছুয়েছে। বাংলাদেশে যার প্রথম ধাক্কা লেগেছে জ্বালানি ও বিদ্যুতে। আর বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনের অধিকাংশ জ্বালানিই। আমদানি করতে হয়। তাই আপাতত সাশ্রয়ের কোনাে বিকল্প নেই। সঙ্গে এও স্মরণে রাখা উচিত, ২০০১-২০০৬ মেয়াদে বিএনপি-জামায়াত সরকার আমলে দেশের চরমে ছিল বিদ্যুৎ সংকট। তখনকার প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার গুণধর পুত্র তারেক রহমান বলেছিলেন, একই সঙ্গে বাসায় এবং মার্কেটে বিদ্যুৎ দেওয়া কোনাে সরকারের পক্ষেই সম্ভব নয়। তখন অনেক খাম্বা দেওয়া হয়েছিল।

তবে এত ক্যাবল ছিল না। আর ক্যাবল ছাড়া তাে বিদ্যুৎ ও চলে। গানে আছে না, লাইন ছাড়া চলে না রেলগাড়ি। বিপরীতে আগের সরকারের অসম্ভবকে সম্ভব করেছে বর্তমান সরকার। প্রাপ্ত পরিসংখানে দেখা গেছে, ২০০৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধি পেয়েছে ১ হাজার ৫৫৬ মিলিয়ন ঘনফুট, এলএনজি আমদানির সক্ষমতা বেড়েছে ১ হাজার এমএমসিএফডি, গ্যাস ক্ষেত্র বেড়েছে পাঁচটি, জ্বালানি তেল সরবরাহ বেড়েছে ৪৫.৮৯ লাখ মেট্রিক টন। জ্বালানি তেল মজুদ সক্ষমতা বেড়েছে ৪.২৮ লাখ মেট্রিক টন (১০ দিন)। এলপিজি সরবরাহ বেড়েছে ৯.৫৫ লাখ মেট্রিক টন এ পরিসংখান স্বস্তির। কিন্তু বিশ্বে চলমান অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে জ্বালানি খাতে এ সক্ষমতা ও প্রবৃদ্ধি স্বস্তি দেবে না সরকারও তা অনুধাবন করেছে।

যে কারণে পরিস্থিতি অতিমাত্রায় লেজেগােবরে হওয়ার আগেই বিদ্যুতে পরিকল্পিত লােডশেডিং শুরু করেছে সরকার। মানতেই হবে, এটি অনিবার্য করণীয়। সঙ্গে আরও কিছু করার আছে। অনেকেই জানেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের নেপথ্য খেলার। বিষয়টি অনেক গভীরে। তা আমজনতার অনুধাবনের বাইরে। তবে সাধারণভাবেই অনুধাবন করা যায় অপচয়ের বিষয়টি মাছের বাজার থেকে বহুতল ভবন, যে পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহারের পাকা ব্যবস্থা করা হয়েছে তা এক কথায় ভয়ংকর। ছােট একটি মাছের বাজারেও অসংখ্য হাই পাওয়ারের বাল্ব জ্বালিয়ে রাখা হয়। বাজারে যত মাছ, তার চেয়ে অনেক বেশিসংখ্যক বাল্ব জ্বলে। একই অবস্থা মুদি, পােশাকের দোকানসহ শপিং মলগুলােয়ও।

আর বহুতল বাণিজ্যিক ভবনগুলাে এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যা আলাে ও বাতাস নিরােধক। এ ক্ষেত্রে একমাত্র ভরসা হচ্ছে বিদ্যুৎ। আর রাস্তায় সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানায় ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য যে গাড়িগুলাে চলে তা-ও জ্বালানিসহ নানামুখী ভয়ানক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। সরকারের নানা পদক্ষেপের ফলে বিদ্যুৎ সহজলভ্য হয়েছে। উৎপাদন বেড়েছে নানা ক্ষেত্রে, গতি এসেছে অর্থনীতিতে। তবে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে বেশ কিছু গােলমেলে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। যে-কোনাে মূল্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গিয়ে খরচের বিষয়টি সম্ভবত বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। চড়ামূল্যে জ্বালানি কিনেই বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করেছে সরকার।

যার অধিকতর চড়ামূল্য দিতে হচ্ছে এখন, সরকার ও জনগণ উভয়কেই। আর এর দায় অবশ্যই সরকারকে নিতে হবে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে ১-২ ঘণ্টার লােডশেডিংয়ে “গেল গেল” বলে রব তুলতে হবে! বিদ্যুতের সরবরাহ না থাকলে, দাম বাড়লে সংগত কারণেই আমরা প্রতিবাদ করি, আন্দোলন করি। কিন্তু গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম দফায় দফায় বাড়ানাের পরও বিদ্যুতের দাম কিন্তু উৎপাদন খরচের চেয়ে অনেক কম। তার মানে যত বিদ্যুৎ রাষ্ট্রের তত লােকসান। আর রাষ্ট্রের এ টাকা কিন্তু জনগণের। মানতেই হবে, ভবিষ্যৎ সংকটের কথা না ভেবে ‘আলাের স্রোতে পাল তুলেছে হাজার। প্রজাপতি’- এ গানের আবেশে বিদ্যুতের আলাের।

বিলাসিতায় গা ভাসানাে হয়েছে। শুধু তাই নয়, অনিয়মলটপাটও হয়েছে। কিন্তু এখন যখন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে গিয়ে রুহুতে টান পড়ার মতাে জ্বালানি আমদানির সক্ষমতা তলানিতে ঠেকেছে, তখন টনক নড়েছে। আমাদের মনে রাখা প্রয়ােজন, বৈশ্বিক বাস্তবতায় বাংলাদেশকে আবার লােডশেডিংয়ের যুগে ফিরতে হয়েছে। আলাের পথে অগ্রযাত্রা হোঁচট খেয়েছে। তবে এমনটা ভাবাও সংগত নয়। যে বাংলাদেশ অন্ধকার যুগে ফিরে গেছে। বাংলাদেশ ঘুরে দাড়াবেই। তবে আমরা যেন বেশি উল্লাস অথবা হতাশায় মাতম না করি জ্বালানি ও বিদ্যুৎ নিয়ে। সঙ্গে এও মনে রাখতে হবে, এ খাতে অকল্পনীয় ক্ষমতাধর মাফিয়ারা সক্রিয়, সব সরকারের সময়ই এরা অনেকটা দানবের মতাে। হােক তা দেশি বা বিদেশি।

এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সরকারি-বেসরকারি ৯০টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে গত বছরের জুলাই থেকে এ বছরের মার্চ পর্যন্ত নয় মাসে। সরকার ক্যাপাসিটি পেমেন্ট বা কেন্দ্র ভাড়া দিয়েছে প্রায় ১৬ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। সে হিসাবে প্রতি মাসে গড়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভাড়া দিতে হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকা। অনেক সময় কোনাে কোনাে বিদ্যুৎ কেন্দ অলস রেখে ভাড়া দিতে হয় বলে এ ক্যাপাসিটি পেমেনট নিয়ে সমালােচনা রয়েছে। বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করেন, দেশে চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা অনেক বেশি। এ কারণে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্যাপাসিটি পেমেন্ট বাবদ সরকারকে অনেক বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে।

এ নিয়েও অনেক মাফিয়ার খেলা আছে বলে মনে করা হয়। এরা সর্বগ্রাসী দানব। এ দানবের গ্রাস থেকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত রক্ষা করার কথা ভাবতে হবে। এ দায়িত রাষ্ট্রের, সরকারের। আর সচেতন মহলের দায়িত্ব হচ্ছে সরকারকে চাপে রাখা। এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন উঠতেই পারে, গ্যাস খাতে গত ২০ বছরে কেন একটি মাত্র কূপ খনন করা হলাে? এটি কি দেশকে আমদানি নির্ভরতার গর্তে ফেল দেওয়ার মাফিয়া কারসাজি, নাকি সরকারের নীতিনির্ধারকদের নীতিহীনতা। অথবা যােগ্যতার ঘাটতির কুফল? নিজের কয়লা খনিতে রেখে আমদানি কেন? দেশি কয়লা উত্তোলনের উদ্যোগের বিরােধিতাকারী অতি সােচ্চার কথিত পরিবেশবাদীরা ভারত থেকে আমদানি করা নিম্নমানের কয়লা প্রশ্নে মুখে কুলুপ এটে থাকেন কেন?

এসব প্রশ্ন নিয়ে ভাবা প্রয়ােজন শেষ কথা হচ্ছে, ক্রাইসিস থেকে শিক্ষা নিতে হবে রাষ্ট্র ও জনগণকে। আর জনগণকে আস্থায় নেওয়ার দায়িত্ব সরকারের। লােডশেডিং দিয়ে মানুষকে কয়েক ঘণ্টার জন্য অন্ধকারে রাখলেও রাষ্ট্রীয় তথ্যের বিষয়ে জনগণকে চিরকালের জন্য অন্ধকারে রাখা যাবে না। মনে রাখা প্রয়ােজন, অন্ধকারেই ষড়যন্ত্রের ডালপালা বেশি বিস্তার করে। আর বাংলাদেশের মতাে স্বাধীনচেতা। দেশগুলাের জন্য বিপদ কিন্তু পায়ে পায়ে। কাজেই আমাদের অতিসতর্কতা প্রয়ােজন। তা না হলে ব্ল্যাক হােলসম গর্তে পড়ার মতাে অঘটন ঘটা বিচিত্র কিছু নয়! অনেকই জানেন, অঘটন ঘটন পটীয়সীরা অতীতের। যে-কোনাে সময়ের চেয়ে এখন অধিক সক্রিয়। এরা মরিয়া হয়ে খেলছে। এরা ১৯৭১-এ পরাজিত শক্তি, ৭৫-এর থিঙ্কট্যাঙ্ক, এরা চায় বাংলাদেশের বিনাশ!

বিদ্যুৎ অপচয় রােধে ইসলামের নির্দেশনা:

বিদ্যুৎ আমাদের জন্য বিশেষ এক নিয়ামত। বিদ্যুৎ কতটুকু নিয়ামত তা আমরা লােডশেডিংয়ের সময় খুব সহজে বঝতে পারি। বিদ্যুৎ ছাড়া জীবন যাপন করা খুবই কষ্টকর। কলকারখানা থেকে শুরু করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতালসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিদ্যুতের প্রয়ােজনীয়তা বলে শেষ করা যাবে না। বিদ্যুৎসহ পৃথিবীর সবকিছু আমাদের উপকারের জন্যই মহান আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। সুরা বাকারার ২৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা সবই তােমাদের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে।

বিদ্যুৎ একটি নিয়ামত আর ইসলামে সব ধরনের নিয়ামতকে সঠিক ভাবে ব্যবহারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমার গ্যাস-বিদ্যুতের বিল দেওয়ার তৌফিক রয়েছে, আমি ফ্রি ব্যবহার করি না, বিল দিচ্ছি বলে বিলাসিতা করে বিদ্যুৎ-গ্যাসের অপচয় করব এ ধরনের শিক্ষা ইসলাম দেয়নি। রসুলুল্লাহ (সা.) নদীর পানিতে অজু করতে গিয়েও পানির অপচয় করতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন, তােমরা পানির অপচয় কোরাে না, যদিও বা প্রবহমান নদীর তীরে অবস্থান কর।’ (ইবনে মাজাহ) বিদ্যুৎ আমাদের জন্য খুবই প্রয়ােজন ও উপকারী।

এর ব্যবহারে আমাদের সচেতন হওয়া জরুরি। অতিরিক্ত বাতি, ফ্যান, এসি বন্ধ করে এর অপচয় রােধ করতে হবে। মনে রাখা জরুরি, অপচয়ের ফলে বিদ্যুতের ঘাটতি দেখা দিলে আমরাই সমস্যায় পড়ব। একটি বাতিতে প্রয়ােজন মিটে যায়, সেখানে অতিরিক্ত বাতি ব্যবহার করছি, রুমে কেউ নেই তবু ফ্যান কিংবা এসি চলে, বাইরে সৌন্দর্যের জন্য হরেক রকমের বাতি জ্বালিয়ে অপচয় করছি, অতিরিক্ত ব্যবহারে যেমন বিদ্যুতের ঘাটতি দেখা দেবে। তেমনি অর্থনৈতিক অপচয় হবে। এজন্য সব ক্ষেত্র অপচয় বন্ধ করে অর্থনৈতিক অপচয় রােধ জরুরি।

অর্থনৈতিকসহ সব ধরনের অপচয় করতে নিষেধ করা হয়েছে। অপচয় অপব্যয় আল্লাহও নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন, “তােমরা আহার কর ও পান কর, কিন্তু অপচয় করবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা আরাফ, আয়াত ৩১)

আমি তাে চাকরি করি, বিল দিলে মালিক কিংবা সরকার দেবে তাই নিজ ইচ্ছানুযায়ী অতিরিক্ত ব্যবহার করছি, এ অতিরিক্ত ব্যবহারের হিসাবও কেয়ামতের ময়দানে আল্লাহর কাছে দিতে হবে। বিদ্যুৎ যেভাবে খুশি সেভাবে ব্যবহার করব, এ ধরনের মানসিকতা দূর করতে হবে। আমাদের সচেতন ও পরিবর্তন হতে হবে। প্রত্যেকে যদি নিজ অবস্থান থেকে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সচেতন হই তাহলে লােডশেডিং থেকে দ্রুত মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

আল্লাহর দেওয়া সব নিয়ামত অপব্যবহার নয়, সচেতন নাগরিক হয়ে সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে শান্তি পাব দুনিয়া ও আখেরাতে। আমরা অপব্যয় করে শয়তানের ভাই হয়ে বাঁচতে চাই না, রসুলুল্লাহর ইমানদার উম্মত হয়ে বাঁচতে চাই। ইরশাদ হচ্ছে, নিশ্চয়ই যারা অপব্যয় করে তারা শয়তানের ভাই এবং শয়তান তার রবের প্রতি খুবই অকৃতজ্ঞ।’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত ২৭)

ভালো লাগলে কিন্তু ফেসবুক পেজ এ লাইক দিতে ভুলে জাবেন না।
আরো তথ্য পেতে ভিজিট করুন.