শিরোনাম https://m.facebook.com/Annotatebd


ডেঙ্গু পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে প্রয়োজন সতর্কতা

ডেঙ্গু পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে প্রয়োজন সতর্কতা

চলতি বছর ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ৫০ হাজার পার হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ বছর দেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ১৫ নভেম্বর ২০২২ পর্যন্ত ৫০ হাজার ৭৫৯ জন। এর মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ৩২ হাজার ৯৯৯, আর ঢাকার বাইরে ১৭ হাজার ৭৬০ জন। চলতি বছর ডেঙ্গুতে এ পর্যন্ত (১৫ নভেম্বর ২০২২) ২১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে কোনো বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা ২০০ ছাড়ায়নি। এ বছর ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের বড় অংশই শিশু।

২০০০ সালে দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয় । ওই বছর মারা যায় ৯৩ জন। এরপর ডেঙ্গুর সবচেয়ে বড় প্রকোপ দেখা দেয় ২০১৯ সালে ওই বছর মারা যান ১৭৯ জন এবং ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন। ওই বছরের আগষ্ট মাসে সর্বোচ্চ ৫২ হাজার ৬৩৬ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়। আর ওই মাসে মারা যান ৮২ জন। করোনা মহামারি শুরুর বছর, অর্থাৎ ২০২০ সালে মারা যান ৭ জন, পরের বছর মারা যান ১০৫ জন।

চলতি নভেম্বর মাসের ১৬ দিনে ডেঙ্গুতে ৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর এ সময়ে আক্রান্ত হয়েছেন ১২ হাজার ৭৩৫ জন। গত ২২ বছরের চিত্র বলছে, বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি থাকে। আর সেপ্টেম্বরের মধ্যেই তা কমে আসে। কিন্তু এ বছরের চিত্র ভিন্ন। এ বছর নভেম্বর মাসের অর্ধেকটা পার হলেও মৃত্যু ও শনাক্তের সংখ্যা কমছে না। এ বছর অক্টোবর মাসে ২১ হাজার ৯৩২ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। চলতি বছরে এক মাসে এ শনাক্তের সংখ্যা সর্বোচ্চ। এ বছর অক্টোবরে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ৮৬ জনের মৃত্যু হয়।

চলতি বছরে এক মাসে মৃত্যুর এ সংখ্যাও সর্বোচ্চ। ২০১৯ সালে অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে শনাক্ত হওয়া ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৮ হাজার ১৪৩ ও ৪ হাজার ১১ জন। বিভাগভিত্তিক হিসাবে বরাবরের মতো এ বছরও সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ঢাকা বিভাগে। এ বিভাগে ১৫ নভেম্বর ২০২২ পর্যন্ত ১৩০ জনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ।

বিগত ১০ বছরে ডেঙ্গুতে মৃত্যু

সালমৃত্যু
২০১৩
২০১৪
২০১৫
২০১৬১৪
২০১৭
২০১৮২৬
২০১৯১৭৯
২০২০
২০২১১০৫
২০২২২০২ (১৫ নভেম্বর পর্যন্ত)
সূত্র: রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

এর মধ্যে ১২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন হাসপাতালে। ঢাকার পর সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগে। এই বিভাগে এখন পর্যন্ত ৫৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে শুধু কক্সবাজারেই মারা গেছেন ২৪ জন। এর মধ্যে বড় অংশটি বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গুর চারটি ধরনের মধ্যে এ বছর তিনটি ধরনেই (ডেন-১, ডেন-২ এবং ডেন-৪) সক্রিয়। এবার দেশে প্রথম বারের মতো ডেন-৪ ধরনের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। ডেঙ্গু রোগীদের প্রায় ১০ শতাংশ এই ধরন বহন করছে।

ডেঙ্গু রোগের এই জটিল পরিস্থিতিতে আক্রান্তের সংখ্যা অধিকাংশ শিশু-কিশোর হওয়ায় জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের শিশুরোগ বিভাগের অধ্যাপক ডা: আব্দুল্লাহ শাহরিয়ারের ‘ডেঙ্গু পরিস্থিতি জটিল : প্রয়োজন সতর্কতা’ শীর্ষক লেখাটি হেলথ ম্যাগাজিনের এ সংখ্যায় প্রকাশিত হলো- ডেঙ্গু মোকাবেলায় লেখাটি সবার উপকারে আসবে বলে আমরা মনে করছি।

ডেঙ্গু জ্বর এক ধরনের ভাইরাসজনিত সংক্রামক রোগ, এডিস ইজিপটি নামক মশার মাধ্যমে এ রোগটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ভাইরাসটির চারটি ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতি রয়েছে। এ বছর সংক্রমণের পর রোগীর রক্ত পরীক্ষা করে সেরোটাইপ-৩এর প্রভাব পাওয়া গেছে। একেক সময় একেকটি প্রজাতির সংক্রমণ হওয়ায় নির্দিষ্ট ভ্যাক্সিন দিয়েও রোগটি দমন করা সম্ভব হয় না।

ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণুবাহী মশা কোনো ব্যক্তিকে কামড়ালে সেই ব্যক্তি চার থেকে ছয় দিনের মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়। আবার আক্রান্ত ব্যক্তিকে কোনো জীবাণুবিহীন এডিস মশা কামড়ালে সেই মশাটিও ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণুবাহী মশায় পরিণত হয়। মে থেকে সেপ্টেম্বর মাস, বিশেষ করে গরম ও বর্ষার সময় ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ অনেক বেশি থাকে। অপরদিকে শীতকালে সাধারণত এই জ্বর হয় না বললেই চলে।

লক্ষণ:
একজন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির সাধারণত উচ্চ জ্বর হয়। অর্থাৎ তাপমাত্রা ১০৪-১০৫ ডিগ্রি ফারেন হাইট বা তার থেকে বেশি হবে। সাথে নিম্নের লক্ষণগুলোর অন্তত দু’টি প্রকাশ পাবে।

  • তীব্র মাথাব্যথা।
  • চোখের পেছনের দিকে তীব্র ব্যথা।
  • জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধিতে ব্যথা।
  • মাংসপেশি অথবা হাড়ে ব্যথা (এর অন্য নাম : হাড়ভাঙা জ্বর)।
  • হামের মতো বা ফুসকুড়ি দেখা যায়।
  • নাক, দাঁতের মাড়ি থেকে অল্প রক্তপাত হতে পারে।
  • রক্তে শ্বেতকণিকার পরিমাণ কমে যাবে।

লক্ষণগুলো রোগীর বয়স অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। ছোট শিশুও প্রথমবার আক্রান্তদের থেকে বয়স্ক, শিশু ও দ্বিতীয়বার আক্রান্তদের মাঝে রোগের তীব্রতা বেশি হয়।

জটিলতা:
সাধারণত তিন থেকে সাত দিনের মধ্যেই জ্বরের তাপমাত্রা কমতে থাকে। তবে যদি নিম্নোক্ত লক্ষণগুলো দেখা যায়, দ্রুত ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।

  • তীব্র পেট ব্যথা ও ক্রমাগত বমি।
  • ত্বকে লাল দাগ।
  • নাক ও মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়লে।
  • বমির সাথে রক্ত এলে।
  • কালো বা আলকাতরার মতো পায়খানা হলে।
  • ত্বক ফ্যাকাশে, ঠাণ্ডা ও স্যাতসেঁতে হলে।
  • শ্বাসকষ্ট হলে।

তবে হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বর কিংবা শক সিনড্রোম হলে দাঁতের মাড়ি, নাক, মুখ ও পায়ুপথে রক্ত আসতে পারে। রোগীর রক্তচাপ কমে যাওয়ায় অস্বস্তিবোধ এমনকি সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়তে পারেন।

প্রতিরোধ:
এ রোগের কোনো টিকা নেই। তাই প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিতে হয়। এ জন্য-
জমে থাকা খোলা পাত্রের পানিতে মশা ডিম পাড়ে। পোষা প্রাণীর খাবার পাত্র, পানির পাত্র, ফুলগাছের টব, নারকেলের খোসা ইত্যাদিতে পানি জমে থাকতে পারে। সেগুলো পরিষ্কার রাখবেন। ঘরে পর্দার আশপাশে, বিছানার নিচে স্প্রে করুন। দিনের বেলায় এরা কামড়ে থাকে। তাই দিনের বেলায়ও মশারি ব্যবহার করুন।

চিকিৎসাঃ
এই রোগের কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তাই রোগের লক্ষণগুলোর ওপর চিকিৎসা দেয়া হয়।

  • রোগীকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে রাখুন।
  • প্রচুর পানি, পানীয় অথবা খাবার স্যালাইন পান করতে দিন।
  • জ্বর হলে স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানিতে কাপড় ভিজিয়ে শরীর বারবার মুছে দিন।
  • জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল ব্যতীত অন্য কোনো ওষুধ দেবেন না।
  • রোগীকে ব্যথার ওষুধ অ্যাসপিরিন বা আইব্রপ্রুফেন-জাতীয় ওষুধ দেবেন না।
  • ডেঙ্গু জ্বরের রোগীর মাঝে অস্থিরতা দেখা দিলে নির্দিষ্ট সময়ান্তে তার রক্তচাপ পরীক্ষা করুন। রক্তচাপের তারতম্য তথা অবনতি ডেঙ্গু শক সিনড্রোমের প্রাথমিক লক্ষণ। ডেঙ্গু শক সিনড্রোমের রোগীদের জরুরি ভিত্তিতে নরমাল স্যালাইন চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে দিতে হবে। প্লাটিলেট কমে ১৫ হাজারের নিচে এলে বা রক্তক্ষরণ দেখা দিলে প্লাটিলেট পরিসঞ্চালনের ব্যবস্থা নিতে হবে।
  • ডেঙ্গু জ্বরের রোগীকে তার রোগের উপসর্গ দেখে যত দ্রুত চিকিৎসা প্রদান করা যায় তা তার শরীরের জন্য ততই মঙ্গলজনক বার্তা বয়ে আনবে।

ভালো লাগলে কিন্তু ফেসবুক পেজ এ লাইক দিতে ভুলে জাবেন না।
আরো তথ্য পেতে ভিজিট করুন.

Post a Comment

0 Comments