phusti Upadan O Rog Protirodhe Mashrum

phusti Upadan O Rog Protirodhe Mashrum

মাশরুম কি:-
মাশরুম হলো ক্ষণযোগ্য মৃতজীবি ছত্রাকের প্রজনন অঙ্গ। বর্তমান ছত্রাকবিদরা বিশ্বের প্রায় ২ লক্ষাধিক প্রজাতির ছত্রাক চিহ্নিত করতে পেরেছেন। এ অসংখ্য ছত্রাকের মধ্য থেকে দীর্ঘ যাচাই ও বাছাই করে যেসব ছত্রাক সম্পূর্ণ খাওয়ার উপযোগী, পুষ্টিকর ও সস্বাদু সেগুলোকেই তাঁরা মাশুরুম হিসেবে গণ্য করেছেন

এবং সে মাশরুম আবার চাষাবাদের পরেও যেন খাওয়ার উপযোগী থাকে সে জন্য চাষাবাদের সর্বাধুনিক পদ্ধতি টিস্যুকালচারের মাধ্যমে বীজ উৎপাদনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাই মাশরুম হচ্ছে সম্পূর্ণ খাওয়ার উপযোগী ছত্রাক। অন্যদিকে প্রাকৃতিকভাবে যত্রতত্র গজিয়ে উঠা ছত্রাক হলো ব্যাঙের ছাতা যা সাধারণত খাওয়ার উপযোগী নয় বরং বিষাক্ত। সুতরাং ব্যাঙের ছাতা এবং মাশরুম এক জিনিস
নয়।

মাশরুম হলো অসংখ্য ছত্রাক প্রজাতি থেকে যাচাই বাছাইকৃত টিস্যু কালচারের মাধ্যমে উৎপন্ন বীজ দ্বারা সম্পূর্ণ পরিচ্ছন্ন পরিবেশে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে চাষ করা ভক্ষণযোগ্য মৃতজীবি ছত্রাকের ফলন্ত অঙ্গ- যা অত্যন্ত সুস্বাদু, পুষ্টিকর ও ঔষধি গুণসম্পন্ন এবং সম্পূর্ণ হালাল।

মাশরুমের ইতিহাস:-
আজ থেকে ৪০০০ বছর পূর্বে অর্থাৎ খৃষ্টপূর্ব ১৯০০-২০০ বছর পূর্বে পৃথিবীতে মাশরুমের প্রচলন ছিল। চৈনিক সভ্যতায় ভেষজ ঔষধ হিসেবে মাশুরুমের বিভিন্ন ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। পবিত্র কোরআন ও হাদীসে মাশুরুমকে অত্যন্ত মর্যাদাকর খাবার হিসেবে হয়েছে।

“ওয়াযাল্লালনা আলাইকুমুল গামা-মা ওয়া আনযালনা আলাইকুমুল মান্না ওয়াস্ সালওয়া কুলুমিন তাইয়্যিবাতি মা রাজাকনা কুম, ওয়ামা জলামুনা ওয়ালাকিন কা-নু আনফুছাহুম ইয়াযলিমুন” (সূরা বাক্কারা, আয়াত ৫৭)। অর্থাৎ আমি মেঘমালা দিয়ে তোমাদের উপর ছায়া দান করেছি এবং তোমাদের জন্য অত্যন্ত সম্মানিত খাবার পাঠিয়েছি মান্না ও সালওয়া। তোমরা খাও সেসব পবিত্র বস্তু যা আমি তোমাদের জন্য দান করেছি।

মাশরুম এক ধরনের মান্না এবং এর রস চোখের জন্য বিশেষ ঔষধ। ১৯৭৯-৮০ সালে বাংলাদেশে প্রথম মাশুরুম চাষ শুরু হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে সাভার ও দেশের বিভিন্ন জায়গায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে মাশুরুম উৎপাদিত হচ্ছে। তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার ভিত্তিতে যে কয়টি প্রজাতির মাশরুম এদেশে জন্মে তা হলো- ন্যামডেক ঋষি মাশরুম, ওয়েষ্টার মাশরুম, শিতাকো মাশরুম, বাটন মাশরুম, কার্ডি সেফ মাশরুম ও শিমাজি মাশরুম।

বাংলাদেশে মাশরুম চাষের প্রয়োজনীয়তা:-
বৈশ্বিক উষ্ণতার এই যুগে বাংলাদেশের মতো স্বল্প সম্পদের দেশে বর্ধিত জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এর জন্য প্রয়োজন বিকল্প খাদ্যের অনুসন্ধান, যা দরিদ্র মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি সমস্যা দূর করার পাশাপাশি পরিবেশকেও সংরক্ষিত রাখবে।

মাশরুম চাষ হতে পারে এমন একটি (Non Green Revolution) যা কৃষি জমি সংরক্ষণ করে শস্য বহুমূখীকরণের পাশাপাশি মানসম্মত ও পুষ্টিকর খাদ্য উৎপাদন, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও পরিবেশ সংরক্ষণে বিশাল ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশ দানাজাতীয় খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও উদ্যান ফসল উৎপাদনে এখনো পিছিয়ে অথচ একজন সুস্থ লোকের জন্য প্রতিদিন ২০০-২৫০ গ্রাম সবজি খাওয়া উচিত (সূত্র: FAO) উন্নত দেশের লোকেরা প্রতিদিন গড়ে ৪০০-৫০০ গ্রাম সবজি খায়।

বিশ্বব্যাপী সবজি গ্রহণের তথ্য উপাত্ত থেকে বোঝা যায়, যে দেশ যত বেশি উন্নত সে দেশ ততবেশি সবজি খায়। কারণ সবজিতে পাওয়া যায় দেহকে সুস্থ, সবল রাখার প্রয়োজনীয় সুষম খাদ্য উপাদান এবং রোগ প্রতিরোধক ভিটামিন ও মিনারেল। অধিক সবজি খাওয়ার ফলে তারা অধিক কর্মক্ষম থাকেন এবং বেশি আয়ু লাভ করেন।

অথচ আমরা প্রতিদিন গড়ে ৪০-৫০ গ্ৰাম (আলু বাদে) সবজি খাচ্ছি। প্রয়োজন ও প্রাপ্তির এই ব্যবধানের কারণে আমাদের দেশের শতকরা ৮৭% লোক অপুষ্টিজনিত রোগে ভোগেন। এ অবস্থা থেকে দেশকে মুক্ত করতে হলে পুষ্টিকর সবজি খাওয়ার অভ্যাস বাড়াতে হবে, আর অধিক পরিমাণে খেতে হলে অধিক পরিমাণ সবজি উৎপাদন করতে হবে।

মাশরুম হলো অসংখ্য ছত্রাক প্রজাতি থেকে যাচাই বাছাইকৃত টিস্যু কালচারের মাধ্যমে উৎপন্ন বীজ দ্বারা সম্পূর্ণ পরিচ্ছন্ন পরিবেশে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে চাষ করা ভক্ষণযোগ্য মৃতজীবি ছত্রাকের ফলন্ত অঙ্গ- যা অত্যন্ত সুস্বাদু, পুষ্টিকর ও ঔষধি গুণসম্পন্ন এবং সম্পূর্ণ হালাল।

মাশরুম ম্যাজিক:-
মাশরুমের অজানা গুণাগুণ জানতে গবেষণা চলছে। সম্প্রতি আবিষ্কৃত হলো মাশরুম ক্যান্সার নিরোধক সবজি। এতে আছে প্রচুর রোগ প্রতিরোধকারী ফাইটোকেমিক্যালস। আন্তর্জাতিক এক গবেষণা থেকে জানা গেছে, এই ফাইটোকেমিক্যালস স্তনের ক্যান্সার কমিয়ে দেয়। চীনা ও কোরীয় নারীদের ওপর গবেষনা করে এটি জানা যায়।

আর ইঁদুরের ওপর গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, এই ফাইটোকেমিক্যালস প্রোস্টেটের ক্যান্সার কমিয়ে দেয় এবং ক্যান্সার সেলগুলোর বিস্তার রোধ করে। হয়ত মানুষের ক্ষেত্রে একই ফল পাওয়া যাবে। এক মাঝারি আকারের পোর্তোবেলো মাশরুম মানুষের দেহের প্রয়োজনের 21% সেলেনিয়াম এবং প্রয়োজনের ১/৩ ভাগ কপার থাকে। একটা মাঝারি সাইজের কলার সমান পটাসিয়াম থাকে।

প্রতিদিন অন্তত এক বেলার খাবারে নিয়মিত মাশরুম খেলে ওজন কমতে বাধ্য। সবচেয়ে মজার ঘটনা হলো মাশরুম ফ্রাই, মাইক্রোওয়েভে গ্রিল করলেও এর গুণাবলি নষ্ট হয় না। এসব তথ্য প্রকাশ করেছে জন হপকিন্স ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথ। মাশরুমকে মাখন বা ননীতে ভাজবেন না। বরং অল্প তেলে ভেজে খান- অনেক উপকার তাতে।

মাশুরুমের পুষ্টিগুণ:-
মাশরুম সুস্বাদু, মৃদু ও রুচিকর গন্ধ এবং কচকচে ভাবের জন্য অমিষ ও নিরামিষভোজী উভয় মানুষের কাছেই জনপ্রিয়। পুষ্টি বিচারে মাশরুম সবার সেরা। কারণ আমাদের খাদ্য তালিকায় যেসব উপাদান অতি প্রয়োজনীয় মিনারেল সেগুলো প্রোটিন, ভিটামিন মাশরুমে উঁচু মাত্রায় বিদ্যমান। অন্যদিকে যেসব খাদ্য উপাদানের আধিক্য আমাদের জটিল মারণব্যাধির দিকে নিয়ে যায়, যেমন- ফ্যাট বা কোলেস্টেরল ও কার্বোহাইড্রেট তা মাশরুমে নেই বললেই চলে।

মাশুরুমের পুষ্টিগুণ (প্রতি ১০০ গ্রামে):-
আমিষ : ২৫-৩৫ গ্রাম
ভিটামিন ও মিনারেল : ৫৭-৬০ গ্রাম
শর্করা : ৫-৬ গ্রাম
চর্বি : ৪-৬ গ্রাম
ফাইবার : ১০-২৮ গ্রাম

আর প্রতি ১০০ গ্রাম তাজা মাশরুমে পুষ্টির পরিমাণ ২৫ শতাংশ বেশি থাকে। অন্যান্য প্রাণিজ আমিষের তুলনায় মাশরুমের আমিষ উৎকৃষ্ট এবং সব বয়সী মানুষের খাবার উপযোগী। এতে আমিষের পরিমাণ শাকসবজির চেয়ে চারগুণ এবং খনিজের পরিমাণ দ্বিগুণ। এটি ফ্যাট অসম্পৃক্ত ফ্যাটিএসিড দ্বারা তৈরী যা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এছাড়া স্ফিঙ্গলিপিড আরগেস্টেরল থাকায় এর মানকে আরও উন্নত করছে।

স্ফিঙ্গলিপিড থাকায় হাড়ের মজ্জা ও ব্রেন ডেভেলপমেন্টে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং আরগেস্টেরলের উপস্থিতির কারণে ভিটামিন-ডি সিনথেসিসে সহায়ক হয় যা হাড় ও এবং আরগেস্টেরলের উপস্থিতির কারণে দাঁত শক্ত ও মজবুত করে। মাশরুম ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায়তা করে। মাশরুমের ফ্যাটে ৭০-৮০ শতাংশ লিনোলিক এসিড রয়েছে যা শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। মাশরুমে কার্বোহাইড্রেট কম, পানিতে দ্রবনীয় এবং শরীরের জন্য অত্যন্ত মধ্যে পলিস্যাকারাইড, উপকারী।

এর মধ্য গ্লাইকোজেন, বিটা-ডি গুক্যান, ল্যাম্পট্রোন, এন্টাডেনিন, ট্রাইটারপিন, এডিনোসিন, ইলুডিন প্রভৃতির উপস্থিতির কারণে দেহের জটিল রোগ নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মাশরুম এসিডিক সুগার ও এসিডিক পলিস্যাকারইড বিশেষ করে এইচ-৫১ সরবরাহ করে। এতে আঁশের পরিমাণ বেশি জাতভেদে ১২-৩২ শতাংশ। ফলে ডায়াবেটিক রোগীদের ইন্সুলিনের পরিমাণ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

ভিটামিন ও মিনারেলের উৎস হিসেবে মারুমের অবস্থান উর্ধ্বে। মাশরুমে আঁশের মধ্যে পটাশিয়াম, ফসফরাস, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের পরিমাণ প্রায় ৬৮ ভাগ, যার ৪২ শতাংশই পটাশিয়াম। এ ছাড়া কপার সেলিনিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকায় চুল পাকা ও পড়া রোধসহ মহিলাদের ব্রেস্ট ক্যান্সার
প্রতিরোধ করে থাকে।

মাশরুম চাষের সুবিধাঃ-
বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু মাশুরুম চাষের অত্যন্ত উপযোগী। সে সাথে চাষের প্রয়োজনীয় উপকরণও যেমন- খড়, কাঠের গুড়া, আঁখের ছোবরাসহ বিভিন্ন কৃষিজ ও শিল্পজ বর্জ্য অত্যন্ত সস্তা এবং সহজলভ্য।

  • মাশরুম চাষে আবাদী জমি প্রয়োজন হয় না।
  • ঘরের মধ্যে চাষ করা যায়।
  • তাকে তাকে সাজিয়ে একটি ঘরকে কয়েকটি ঘরের সমান ব্যবহার করা যায়।
  • অত্যন্ত অল্প সময়ে অর্থাৎ মাত্র ৭-১০ দিনের মধ্যে মাশরুম পাওয়া যায় যা বিশ্বের অন্য কোনো ফসলের বেলায় প্রযোজ্য নয়।

মাশরুম চাষাবাদ পদ্ধতিঃ-
এত গুণসম্পন্ন একটি সবজি শহরের মানুষ বাসার বারান্দায় ছোট একটু জায়গা নিয়ে চাষ করতে পারেন। চাষ পদ্ধতি অনেক সহজ। এটা চাষ করতে সূর্যালোকের প্রয়োজন হয় না। বাজার থেকে মাশরুমের বীজ (বাণিজ্যিক স্পন) কিনে আনার পর প্যাকেটের দুই কোণাযুক্ত কাঁধ বরাবর প্রতি কাঁধে ২ ইঞ্চি লম্বা ১ ইঞ্চি ব্যাস করে কাটতে হবে।

উভয় পাশের কাটা জায়গার সাদা অংশ ব্রেড দিয়ে চেঁছে ফেলতে হবে। এবার প্যাকেটটি উপুর করে ৫- ১৫ মিনিট পানিতে ডুবিয়ে রাখতে হবে। তারপর পানি ভালোভাবে ঝরিয়ে চাষের জায়গায় বসিয়ে দিতে হবে। এরপর কাজের মধ্যে দিনে ৩-৪ বার পানি স্প্রে করতে হবে। স্পনের চারপাশের আর্দ্রতা ৭০-৮০% রাখতে হবে।

এই আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করাই মাশরুম চাষের প্রধান কাজ। এভাবে ৭-৮ দিন পরিচর্যা করার পর মাশরুম সংগ্রহের উপযুক্ত হবে। মাশরুম সংগ্রহের পর একদিন বিশ্রাম অবস্থায় রাখতে হবে। পরের দিন আগের কাটা অংশে পুনরায় ব্লেড দিয়ে চেঁছে ফেলে পানি স্প্রে করতে হবে। সন্ধ্যার পর ও সূর্যোদয়ের আগে পানি স্প্রে করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়।

ফ্যামিলি ফার্মিং : একটি বাড়ি একটি খামার:-
ক্ষুধা ও দারিদ্র দূরকরণে খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি প্রদানে জীবনমান উন্নয়নে প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনায় পরিবেশ রক্ষায় এবং টেকশই উন্নয়নে বিশ্বব্যাপি গ্রামঞ্চলের কৃষকরা গৃহকোনের জমি কাজে লাগিয়ে যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে সেদিকে দৃষ্টি ফেরানো এবং তাদেরকে উৎসাহিত করা এই প্রতিপাদ্যর মূলকথা।

আমাদের দেশে গ্রাম ও শহরে প্রত্যেক পরিবারের ঘরকে ব্যবহার করে মাশরুম চাষ করা যেতে পারে। এই বিকল্প খাদ্য চাষের মাধ্যমে কৃষি জমি সংরক্ষণ করে শস্য বহুমুখীকরণের পাশাপাশি মান সম্মত ও পুষ্টিকর খাদ্য উৎপাদন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও পরিবেশ সংরক্ষণ সম্ভব।

বিশ্ব খাদ্য দিবসের প্রতিপাদ্যের সাথে সরকারের একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের যথেষ্ট মিল রয়েছে। স্থানীয় সরকার পলী উন্নয়ন সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীনে এই প্রকল্প বাস্তবায়িক হচ্ছে। গ্রামকে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের মূল ভিত্তি এবং গ্রামীন অর্থনীতিকে শক্তিশালী

করার লক্ষ্য নিয়ে ২০০৯ সালে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প যাত্রা শুরু করে। এরই মধ্যে দশ সহস্রধীক গ্রামের ৬ লক্ষাধীক সুবিধাভোগী পরিবারের মধ্যে দুধেল গাভী, গৃহ নির্মাণ সামগ্রী ও শাক-সবজীর বীজ বিতরণ করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বর্তমানে সারা দেশে সমতার ভিত্তিতে নতুন আঙ্গিকে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যেগ গ্রহন করা হয়েছে। তার বাজেট ৫,৯২৫ কোটি টাকা। বাংলাদেশে গ্রামীন জনপদের দরিদ্র জনগোষ্ঠীসহ সকল নাগরিক হবে এই প্রকল্পের মূল ও প্রাথমিক উপকারভোগী।

একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের মূল লক্ষ্য কৃষি, মৎস চাষ, পশুপালন, ইত্যাদির মাধ্যমে প্রতিটি পরিবারকে টেকশই আর্থিক কার্যক্রমের একক হিসেবে গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে জাতীয় দারিদ্র ৪০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ আনা।

মাশরুমের রকমারী খাবার:-
ভেজাল থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে এবং শরীরকে সুস্থ ফুরফুরে তরতাজা রোগমুক্ত রাখতে অবশ্যই মাশরুম একটি বিকল্প কিন্তু অপরিহার্য খাবার। বর্তমানে আমাদের দেশে বাজারে অধিকাংশ পণ্য বিষক্রিয়াযুক্ত। যার ফলে ক্রেতা/ভোক্তা খাদ্য ও পণ্য ক্রয়ে দ্বিধান্বিত, তারা ভরসা পাচ্ছে না কি খাবেন। ভেজালের কারণে আতঙ্কিত মানুষ প্রতিনিয়ত খাবারের তালিকা করে এবং উচ্চমূল্য প্রদান করে ও ভেজালমুক্ত সুষম খাদ্যটি পাওয়ার নিশ্চয়তা পাচ্ছে না।

মাশরুমের রকমারী খাবার রয়েছে যথা- মাশরুম ফ্রাই, চপ, কাবাব, ফুলকি, পাপর, চিপস, সালাদ, মাশরুম বিফ ভুনা, সবজি, মাশরুম স্যুপ, চা, আচার, বিস্কুট, কেক প্রভৃতি ছাড়াও আরো অসংখ্য উৎকৃষ্ট ও রোগ প্রতিরোধী পুষ্টিযুক্ত খাবার। বাংলাদেশে বর্তমানে বড় শহরের সুপারশপে ও হোটেলে মাশরুমের বিভিন্ন খাবার তৈরী ও পাউডার প্যাকেটজাত অবস্থায় বিক্রি হচ্ছে।

মাশরুমের ঔষধিগুণ:-
পুষ্টি ও ফিজিক্যাল সাইন্টিস্টদের মতে জটিল ও কঠিন রোগের প্রতিরোধক ও প্রতিষেধক হিসেবে মাশরুম অত্যন্ত কার্যকর। ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, দাঁত ও হাঁড়ের গঠন বৃদ্ধি, হেপাটাইটিস-বি জন্ডিস, ক্যান্সার ও টিউমার প্রতিরোধ করে। মাশরুম মেদ ভুড়ি কমায়, আমাশয় নিরাময় ও যৌন অক্ষমতা দূর করে, হাইপার টেনশন, মেরুদন্ডের ক্ষয়, পেটের পিড়া, কিডনি রোগ, অ্যালার্জি রোধ করে।

এতে উপস্থিত ফলিক এসিড ও লৌহ রক্তশূণ্যতা দূর করে। মাশরুমে উপস্থিত ট্রাইটারপিন নামক উপাদান মারণব্যাধি এইডস প্রতিরোধ করে। ন্যামডেক মাশরুম- লিভার কার্যক্রম সঠিক রাখে, ইমুন সিস্টেম উন্নত করে, ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। শিতাকো মাশরুম- রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কম করে। অ্যান্টি-ক্যান্সার এজেন্ট হিসেবে কাজ করে।

বটন মাশরুম- ইনসুলিন নিঃসরণ ত্বরান্বিত করে। কান মাশুরুম- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে। ওয়েস্টার মাশরুম- রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কম করে। ইনোকি মাশরুম- অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ক্যান্সার এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। কার্ডি সেফ মাশরুম- ফুসফুসের ইনফেকশন নির্মূল করে, অবসন্নতা দূর করে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে।

ভিটামিন আমাদের দেহে কো-এনজাইম হিসেবে কাজ করে থাকে। সরাসরি ভিটামিন মানব দেহে কোনো প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। তাই মাশরুমে যেসব ভিটামিন রয়েছে তা একজন মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সু-স্বাস্থ্য নিয়ে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা দেয়। শুধু তাই নয় মাশরুম নিয়মিত খেলে একজন মানুষকে এটা কোনো রোগে আক্রমণ করতে পারে না। গবেষণালব্দ ফল। কথায় আছে রোগমুক্ত স্বাস্থ্য চান- নিয়মিত মাশরুম খান।

মাশরুম ক্যান্সার প্রতিরোধে অনন্য:-
ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশ প্রায় ১২ লাখ লোক ক্যান্সারে আক্রান্ত। খাদ্যে ভেজাল ও খাদ্যাভ্যাসের কারণে এই সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বিশ্বে ক্যান্সার আক্রান্ত দেশগুলোর মধ্যে ভারতের অবস্থান দ্বিতীয়। খাদ্য ও খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে ক্যান্সার হওয়ার কারণ ও এর প্রতিকার ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে খাদ্যে ভেজাল মেশানোর পদ্ধতিরও পরিবর্তন ঘটেছে।

স্বাদ, বর্ণ, গন্ধ ইত্যাদিকে আকর্ষণীয় করতে নানান কৃত্রিম রঙ, গন্ধ নির্বিচারে ব্যবহার হচ্ছে। যেমন শাকসবজি তুঁতের দ্রবণে চুবিয়ে তরতাজা দেখানোর চেষ্টা, বরফ দেয়া পঁচা মাছের কানে কঙ্গো রেড বা রোডমিন বি, বিভিন্ন মিষ্টিতে যেমন বোঁদে, মিহিদানা, দরবেশ মিলেন, ইয়েলো ইত্যাদি বিষাক্ত রঙ সর্বদাই ব্যবহার হচ্ছে। এছাড়াও ডায়মন্ড গ্রিণ, অরেঞ্জ টু, কেশর রঙ লেড, ব্রোমেট, আয়রণ অক্সাইড ইত্যাদি নিষিদ্ধ রঙয়ের যথেচ্ছ ব্যবহারও ক্যান্সার শত্রুকে নিঃশব্দে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে।

প্রসঙ্গত বলা যায়, ওয়ার্ল্ড রিসার্চ ক্যান্সার ও আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব ক্যান্সার রিসার্চ, একটানা চার বছর বিশ্বের প্রথম সারির ক্যান্সার বিশেষজ্ঞদের নিয়ে ১০০-এর বেশি দেশ থেকে আসা খাদ্য ও ক্যান্সার শীর্ষক প্রায় পাঁচ হাজার গবেষণার ফল পরীক্ষা করেছেন। এই পরীক্ষার ফল “ফুড নিউট্রিশন অ্যান্ড প্রিভেনশন অব ক্যান্সার” নামক এক বইয়ে তাদের উচ্চকিত ঘোষণা হলো— কিছু নিয়ন্ত্রিত সু-অভ্যাসের দ্বারা শরীরের নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্যান্সার ৩০-৭৫ শতাংশ পর্যন্ত রোধ করা যায়।

এ ব্যবস্থাগুলোর মূল কথা হলো- খাওয়া- দাওয়ার ক্ষেত্রে কৃত্রিমতা ছেড়ে প্রকৃতির কাছে ফিরে যাওয়া। যেমন- যথাযথভাবে খাবার সংরক্ষণ না করলে বা দীর্ঘদিন গুদামজাত থাকলে অ্যাসপারজিলাস নামক এক ধরনের ছত্রাক জন্মাতে পারে। যা থেকে আলফাটক্সিন নামক বিষ নির্গত হয়, যার সঙ্গে লিভার ক্যান্সারের সম্পর্ক আছে।

নাগরিক জীবনে আমাদের প্যাকেটজাত খাবারকে অবিকৃত রাখার জন্য নাইট্রাইট যৌগ মেশানো হচ্ছে, যেগুলো ভীষণ ক্যান্সার উদ্দীপক। এ কাজের সেরা হাতিয়ার নানা ধরনের ভিটামিন, যার মধ্যে ভিটামিন-সি ও ই। আর মাশুরুমই হলো এই দুই উপাদানের এক উদ্ভিদ যা নিয়মিত খেলে দেখা গেছে, মলাশয়ের ক্যান্সার ৩৩ শতাংশ পর্যন্ত রোধ করা সম্ভব। যেসব মহিলা নিয়মিত মাশরুম খান তারা স্তন ক্যান্সার থেকে ৫০ শতাংশ কম ভোগেন।

পরিসংখানে দেখা গেছে, পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় ফ্রান্সবাসী এ রোগে কম আক্রান্ত হন। তারা নিয়মিত মাশরুম খান বলে বিগত এক শতাব্দী ধরে সেখানে এ রোগটির প্রাদুর্ভাব কম বলে দাবি করা হয়। ক্যান্সার আটকাতে এবার আমরা আলোচনা করবো মাশরুম কিভাবে ক্যান্সার নামক মারণব্যাধি থেকে মানুষকে সুরক্ষা দিচ্ছে? আমরা সাধারণত খাদ্য গ্রহণ করি দৈহিক শক্তি অর্জনের জন্য যা আমাদের শারীরিক ক্রিয়া, শরীরের গঠন, কায়িক পরিশ্রম ইত্যাদির ওপর নির্ভরশীল।

বিভিন্ন আবহাওয়ার তারতম্যের ওপর গবেষণা করে দেখা গেছে, সাধারণত একজন পুরুষ মানুষের পক্ষে দৈনিক ২৪০০ থেকে ৪০০০ কিলোক্যালরি এবং একজন মহিলার ১৭০০-১৯০০ কিলোক্যালোরি খাদ্যশক্তি প্রয়োজন। এই শক্তি বা ক্যালোরির প্রয়োজনে আমরা আমিষ, স্নেহ ও শর্করাজাতীয় খাদ্য গ্রহণ করে থাকি ।

পরিসংখানে দেখা গেছে, যেখানে স্নেহজাতীয় খাদ্য গ্রহণের প্রবণতা বেশি সেখানে ক্যান্সারের প্রকোপও বেশি দেখা যায়। যদি স্নেহজাতীয় খাদ্য থেকে উদ্ভুত ক্যালোরির পরিমাণ মোট প্রয়োজনীয় দৈনিক ক্যালোরির পরিমাণের শতকরা চল্লিশ বা তার বেশি হয় তবে এরূপ খাদ্য গ্রহণকারীর মধ্যে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও বেশি থাকে। শুধু তাই নয়, সমীক্ষায় এ সত্য প্রমাণিত হয়েছে যে,

এই স্নেহজাতীয় পদার্থ থেকে উদ্ভূত ক্যালোরির পরিমাণ যদি দৈনিক ২০ ভাগ বা তার নীচে রাখা যায়, তবে রোগটি সহজে আক্রমণ করতে পারে না। মাশরুম নিজেই প্রায় স্নেহ বর্জিত এবং এতে শর্করা প্রায় নেই বললেই চলে। সুতরাং এতসব গুণাগুণের কারণে মাশরুমকে সহজেই আমাদের দৈনিক খাদ্য তালিকায় অগ্রাধিকার দিতে পারি। এ ছাড়াও মাশরুম বেশি খাওয়ার আরেকটি সুবিধা হলো,

এতে খনিজ লবণের পরিমাণ অন্যান্য শাকসবজির প্রায় দ্বিগুণ, যা সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে। মাশরুমের মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণে রোটিনি থাকার ফলে টিউমার ও ক্যান্সার থেকে শরীরকে সুরক্ষা ও সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

মাশরুম চাষ:-
একটি লাভজনক ব্যবসা। কারণ তুলনামূলকভাবে কম পুঁজি দরকার হয়। বিনিয়োগকৃত অর্থ অল্প সময়ে ফেরত আসে এবং অল্প শ্রম প্রয়োজন হয় । বাজারমূল্য অধিক। একর প্রতি ফলন অত্যধিক। মাশরুম চাষে রোদে পুড়তে হয় না, মাঠে যেতে হয় না এবং ঘরে থেকেই এর উৎপাদন ও ব্যবসা পরিচালনা করা যায়।

মাশরুম চাষের অর্থনৈতিক গুরুত্ব:-
মাশরুম চাষ একটি লাভজনক ব্যবসা। কারণ তুলনামূলকভাবে কম পুঁজি দরকার হয়। বিনিয়োগকৃত অর্থ অল্প সময়ে ফেরত আসে এবং অল্প শ্রম প্রয়োজন হয়। বাজারমূল্য অধিক। একর প্রতি ফলন অত্যধিক। মাশরুম চাষে রোদে পুড়তে হয় না, মাঠে যেতে হয় না এবং ঘরে থেকেই এর উৎপাদন ও ব্যবসা পরিচালনা করা যায়। সর্বোপরি মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণসহ বেকারত্বের অভিশাপ থেকে সমাজ ও দেশ মুক্তি পেতে পারে।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে এ কথাটি এখন জোর দিয়ে বলা যায়, মাশরুম চাষের মাধ্যমে দেশের পুষ্টি উন্নয়ন, দারিদ্র বিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি বা বেকারত্ব দূরীকরণ, বিশেষ করে মহিলাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, আমদানী ব্যয় হ্রাস এবং রপ্তানী আয় বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিবেশ উন্নয়নের এক অপূর্ব সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব।

এ কারণে বাংলাদেশের ঘরে ঘরে মাশরুমের চাষ হওয়া দরকার, পরিবারের সব সদস্যের মাশরুম খাওয়া প্রয়োজন এবং মাশরুমের উপকারীতা সবাইকে বুঝিয়ে মাশরুম চাষকে একটি সামাজিক আন্দোলনের পর্যায়ে নিয়ে আসা একান্ত প্রয়োজন।

phusti Upadan O Rog Protirodhe Mashrum

ভালো লাগলে কিন্তু ফেসবুক পেজ এ লাইক দিতে ভুলে জাবেন না।
আরো সাস্থ্য সম্পর্কে জানতে ভিজিট করুন.