শীতকালীন রোগ ব্যাধি শীতে পা ফাটলে বিকল্প চিকিৎসা

শীতের হাওয়ার রুক্ষ্মতা শুষ্ক ত্বকে নানা সমস্যা ডেকে আনে। পায়ের পাতা ফেটে যাওয়ায় কষ্ট অনেকেই পান। এমনিতেই শীতে কম বেশি চামড়া ফাটে। কিন্তু অনেক ক্ষেতে দেখা যায় পা ফাটা মারাত্মক আকার ধারণ করে। হাত-পায়ের চামড়া ফেটে গিয়ে রক্ত বেরোনোর ঘটনা কিন্তু স্বাভাবিক নয়। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে ত্বকের অন্য কোনো বড় সমস্যা রয়েছে, যা শীতকালে বেড়ে যায়।

হেরিডিটারি পামোপ্লান্টার কেরাটোডার্মা:-
এটি এক ধরনের জিনবাহিত রোগ। এ ক্ষেত্রে রোগীর ত্বক প্রচন্ড পুরু, যা স্বাভারিক বলে গণ্য হয় না। ডা: প্রকাশ মল্লিকের কথায়- ‘এ ক্ষেত্রে রোগীর চামড়া স্বাভাবিকের চেয়ে ৪০ শতাংশ বেশি মোটা হয়। কাঠের মতো শক্ত মনে হয়’। এই ধরনের রোগীদের হাত-পা খুব বেশি ফাটে। এমনকি তাদের দৈনিক কাজকর্ম পর্যন্ত ব্যাহত হয়। এর কোনো দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা হয় না। সম্প্রতি রেটিনয়েডস জাতীয় কিছু ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসার জন্য ফিজিওথেরাপির সাহায্য নেওয়া হয়। এই ধরনের সমস্যা নিয়ে চলতে চলতে রোগী নিজস্ব মেকানিজম তৈরী করে নেন। সেভাবেই তারা রোজকার কাজকর্ম চালিয়ে যান। শীতপ্রধান এলাকায় যদি এই ধরনের রোগীরা থাকেন, তাহলে তাদের কষ্ট আরো বেশি।

সোরিয়াসিস:-
এটি কিন্তু পুরোপুরি জিনবাহিত নয়। এই রোগটিকে বলা হয় জেনেটিক্যাল মিডিয়েটেড ডিজিজ। হাত-পায়ের চাকা চাকা দাগ হয়ে রোগটিকে বলা হয় যাওয়া, চুলকানি, ছাল ওঠা এগুলো এ রোগের উপসর্গ। আরো একটি উপসর্গ হাত-পা ফেটে যাওয়া। বিশেষত পা ফেটে লম্বা লম্বা ফিশার মতো হয়, যেখান দিয়ে রক্তও বেরোতে পারে। শীতকালে এই ফাটা বেশি বাড়ে। জ্বালা-যন্ত্রণাও বাড়বে এই ধরনের সমস্যায়।

চিকিৎসা:-
রোগ সারতে সময় লাগে। খাওয়ার ওষুধ দেওয়া হয়। পাশাপাশি ফাটা জায়গায় লাগানোর জন্য অ্যান্টি ব্যাকটিরিয়া ক্রিম, ফুসিডিক অ্যাসিড ক্রিম দেওয়া হয়। পেট্রোলিয়াম জেলি বা ভালো মানের ময়েশ্চারাইজারও এই সোরিয়াসিস নিরাময়ে ভালো কাজ দেয়।

এগজিমা বা অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস:-
সোরিয়াসিসের সঙ্গে এই রোগের ক্ষেত্রে পা ফাটার পার্থক্য অনেক নিরীক্ষা করা হয় এ ক্ষেত্রে। হিস্টোপ্যাথলজির মতো পরীক্ষাও করে সময়েই বোঝা যায় না। তখন আলাদা করে ত্বকের নমুনা নিয়ে পরীক্ষা
দেখতে হয়।

চিকিৎসা:-
সোরিয়াসিসের চেয়ে এই রোগ সারতে কম সময় লাগে। ওষুধের প্রয়োগও কম করতে হয়। ত্বকে লাগানোর ক্রিম দুটি ক্ষেত্রেই মূলত এক। তবে খাওয়ার ওষুধের মধ্যে অবশ্যই বিশেষ তফাৎ রয়েছে।

পিটরিয়াসিস রুবরা পাইলারিস (পিআরপি):-
এটিও একটি জিনবাহিত রোগ। এই রোগ যাদের আছে শীতকালে তাদের হাত-পা প্রচন্ড শুষ্ক হয়ে যায় এবং সোরিয়াসিসের মতোই পা
ফেটে যায়।

চিকিৎসা:-
খাওয়ার ওষুধ এবং পায়ে লাগানোর ওষুধ দেওয়া হয়।

সাবধানতা:-
যেসব ব্যক্তিদের এই ধরনের সমস্যা থাকে, তাদের সবসময় কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। কারণ শীতে এই রোগের প্রকোপ বাড়ে।

মোজা পরে থাকা:-
শীত অল্প পড়লেই মোজা পরার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। কারণ এতে ঠান্ডা, দূষণ, ধুলোবালি এসবের হাত থেকে পা বাঁচিয়ে রাখা যায়। তা ছাড়া, মোজা শুধু যে পা ভালো রাখবে তা নয়, পোশাকের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মোজা পরলে তা আপনার নিজস্ব স্টাইল স্টেটমেন্টও তৈরি করবে।

নুন পানিতে পা ভেজানো:-
আধা বালতি ঈষদুষ্ণ পানিতে এক চিমটে নুন দিয়ে যদি সেই পানিতে পা আধা ঘণ্টা চুবিয়ে রাখা যায়, তবে বেশ আরাম পাওয়া যায়। এটি অবশ্য যাদের পা ফাটার সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য নয়। পা ভালো রাখতে যে কেউ করতে পারেন। কারণ শীতকালে যাদের অল্প অল্প পা
ফাটে বা পা ফাটতে শুরু হয়ে যায় তাদের পা ভালো রাখতে এটি খুবই কার্যকর একটি ঘরোয়া উপায়।

স্ক্রাবিং:-
পিউমিস স্টোন দিয়ে নিয়মিত পা স্ক্রাব করা সবার জন্যই জরুরি। এতে পায়ে ময়লা জমে না।

তেল ও ময়েশ্চারাইজারের ব্যবহার:-
গোসলের আগে ভালো করে নারকেল তেল মাখলেও উপকার পাওয়া যায়। গোসলের পরেও ভালো ময়েশ্চারাইজার বা বডি বাটার পায়ে লাগানো উচিৎ।

স্টেরয়েড ক্রিম লাগানো:-
যদি এর পরেও পা ফাটা না কমে, তখন স্টেরয়েড ক্রিম দেন চিকিৎসকরা। টানা এক বা দেড়মাস ওই ক্রিম লাগালে অনেকটাই উপকার পান রোগী, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কখনও এই ধরনের ক্রিম ব্যবহার করা উচিৎ নয়। পা ফাটার এই সমস্যাগুলো অধিকাংশই আগেভাগে সতর্ক হলে এড়ানো সম্ভব। ওষুধ খাওয়ার মতো বাড়াবাড়ি পর্যায়ে তা খুব কম ক্ষেত্রেই পৌঁছায়। তবে পা ফাটা আদৌ চর্ম রোগ না-কি শীতে ফাটা, সে সম্পর্কে সচেতনতা জরুরী।

Shitkalin Rog Bedhi Shite Pa Fatle Bikolpo Cikitsha

ভালো লাগলে কিন্তু ফেসবুক পেজ এ লাইক দিতে ভুলে জাবেন না।
আরো সাস্থ্য সম্পর্কে জানতে ভিজিট করুন.