করােনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন নিয়ে নতুন শঙ্কা দেখা দিয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলােতে। প্রায় দেড় বছর বন্ধ থাকার পর গত সেপ্টেম্বরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলাে খুলে দেওয়ার পর এখনাে স্বাভাবিক হয়নি পাঠদান কার্যক্রম। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের বিভিন্ন শ্রেণিতে সপ্তাহে মাত্র এক দিন করে চলছে শিক্ষাদান। করােনায় তৈরি হওয়া সেশনজট কাটিয়ে উঠতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় গুলাে। এর মধ্যে নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ায় শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক হওয়া নিয়ে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ইতােমধ্যে অনির্দিষ্টকালের জন্য সশরীরে পাঠদান বন্ধ করেছে। এতে আরও আতঙ্ক বেড়েছে স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় গুলােতে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলাের আবাসিক হলে গণরুম ছাড়াও নির্ধারিত আসনের বেশি শিক্ষার্থী অবস্থান করছেন। তাই এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বিশেষ সতর্ক থাকতে হচ্ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে স্কুল- কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা করছেন শিক্ষক- শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকরাও। এদিকে সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির এক বক্তব্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা আরও প্রকট হয়ে উঠেছে। গত সােমবার সিনেম্যাকিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, আমরা করােনা ভাইরাস পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। সংক্রমণের হার ক্রমে বাড়ছে। যদি শিক্ষক- শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতের জন্য ক্লাস কমাতে হয়, কমিয়ে দেব। বন্ধ করার প্রয়ােজন হলে বন্ধ করে দেব। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মার্চের আগে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠদানের চলমান সূচি বৃদ্ধি করা হচ্ছে না। কারণ, গত বছর জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত করােনা সংক্রমণের উর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা গেছে। তাই আপাতত ক্লাস বাড়ানাের ঝুঁকি নেবে না সরকার। বর্তমানে শুধু এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের নিয়মিত ক্লাস চলছে। এদিকে বিভিন্ন পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীরে স্বাভাবিক ভাবে ক্লাস চললেও কয়েকটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় এরই মধ্যে অনলাইন ক্লাস কার্যক্রমে জোর দিয়েছে। তথ্য মতে, জানুয়ারিতে এসে গত এক সপ্তাহে দ্বিগুণ হয়েছে করােনা শনাক্তের হার। সংক্রমণের বিস্তার ঠেকাতে জোর দেওয়া হয়েছে শিক্ষার্থীদের টিকাদান কার্যক্রমেও। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর সূত্র জানায়, সারা দেশে মাধ্যমিক পর্যায়ে (১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী) শিক্ষার্থী রয়েছে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ। এদের টিকাদান কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে সরকার। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্র জানায়, ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রথম ডােজ সম্পন্ন করেছে ৪৫ লাখ ৭৮ হাজার ৯৫৮ জন। আর দ্বিতীয় ডােজ সম্পন্ন করেছে ৬ লাখ ৭৭ হাজার ৪১৭ জন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ফেরদৌস জামান জানান, জাবি প্রশাসন সিন্ডিকেটে সশরীরে ক্লাস বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় গুলাের জন্য নতুন কোনাে সিদ্ধান্ত আসেনি। কোনাে সিদ্ধান্ত পেলে বিশ্ববিদ্যালয় গুলােকে জানিয়ে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় গুলাে খােলার আগে ২৪ লাখের বেশি শিক্ষার্থীর তথ্য স্বাস্থ্য অধিদফতরে পাঠানাে হয়েছিল। তারপর রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই গণহারে শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় আনা হয়েছিল। এ ছাড়া বর্তমানে স্বাভাবিক ভাবেই শিক্ষার্থীদের টিকা নেওয়ার পথ উন্মুক্ত রয়েছে। সব মিলে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় শতভাগ শিক্ষার্থী প্রথম ও দ্বিতীয় ডােজ সম্পন্ন করেছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, ওমিক্রনের বিস্তার ঠেকাতে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত সশরীরে ক্লাস বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। তবে চলমান গ্রীক্ষা, ব্যবহারিক ক্লাস এবং দাফতরিক কার্যক্রম সশরীরে অব্যাহত থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল গুলােতে বড় পরিসরে আইসােলেশন করার কথাও ভাবছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। প্রতি হলে অন্তত চারজন শিক্ষার্থীর জন্য আইসােলেশনের ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ভালো লাগলে কিন্তু ফেসবুক পেজ এ লাইক দিতে ভুলে জাবেন না।
আরো তথ্য পেতে ভিজিট করুন.