প্রশ্নঃ মাঙ্কিপক্স কি?
উত্তরঃ মাঙ্কিপক্স একটি ভাইরাস জনিত প্রাণিজাত (zoonotic) রােগ।
প্রশ্নঃ এ রােগকে কেন মাঙ্কিপক্স বলা হয়?
উত্তরঃ ১৯৫৮ সালে ডেনমার্ক-এ বানরের দেহে সর্বপ্রথম এ রােগ সনাক্ত হয় বলে একে মাঙ্কিপক্স বলা হয়।
প্রশ্নঃ এ রােগটি কোথায় দেখা যায়?
উত্তরঃ এ রােগটির প্রাদুর্ভাব প্রধানত মধ্য আফ্রিকা ও পশ্চিম আফ্রিকায় দেখা যায়। ইতিপূর্বে এছাড়া অনান্য দেশেও এ রােগের প্রাদূর্ভাব দেখা গেছে। তবে সে ক্ষেত্রে উক্ত দেশ সমূহে ভ্রমণের ইতি হাস অথবা উক্ত দেশ সমূহ হতে আমদানিকৃত প্রাণীর সংস্পর্শে আসার ইতিহাস আছে।
প্রশ্নঃ এ রােগে কি কি উপসর্গ দেখা যায়?
উত্তরঃ সাধারণ উপসর্গগুলাে হলঃ
• জ্বর (৩৮° সে-এর বেশী)।
• প্রচন্ড মাথা ব্যথা।
• শরীরের বিভিন্ন জায়গায় লসিকাগ্রন্থি ফুলে যাওয়া ও ব্যথা (Lymphadenopathy).
• মাংসপেশীতে ব্যথা.
• অবসাদগ্রস্ততা ফুস্কুড়ি- যা মুখ থেকে শুরু হয়ে পর্যায়ক্রমে হাতের তালু, পায়ের তালু সহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পরে (সাধারণত জ্বরের ৩ দিনের মধ্যে).
প্রশ্নঃ উপসর্গগুলাে কত দিন স্থায়ী হয়?
উত্তরঃ সাধারণত উপসর্গ শুরুর ২ থেকে ৪ সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
প্রশ্নঃ উপসর্গ দেখা দিলে করণীয় কি?
উত্তরঃ উপসর্গ দেখা দিলে করণীয়ঃ
• সবার আগে নিজেকে অন্যদের কাছ হতে আলাদা করে রাখতে হবে।
• সাথে সাথে চিকিৎসক/ নিকটস্থ স্থানীয় স্বাস্থ্য কেন্দ্র/ হাসপাতালে যােগাযােগ করবেন।
• সাথে সাথে আইইডিসিআর-এর হটলাইনে (১০৬৫৫) যােগাযােগ করবেন ।
প্রশ্নঃ আক্রান্ত ব্যক্তি অসুস্থতার কোন পর্যায়ে এ রােগ ছড়ায়?
উত্তরঃ দৃশ্যমান ফুস্কুড়ি (vesicle, pustule) থেকে শুরু করে ফুস্কুড়ির খােসা (crust) পড়ে যাওয়া পর্যন্ত – আক্রান্ত ব্যাক্তি হতে রােগ ছড়াতে পারে।
প্রশ্নঃ এ রােগে কি কি জটিলতা হতে পারে?
উত্তরঃ প্রায় সকল ক্ষেত্রেই কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ হয়ে যায়। তবে কারও কারও ক্ষেত্রে এটা শারীরিক জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে (দুর্বল রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তি যেমন- অনিয়ন্ত্রিত ডায়বেটিস, কিডনি রােগী, ক্যান্সারের রােগী, এইডস-এর রােগী, নবজাতক শিশু, গর্ভবতী নারী), এমনকি মৃত্যু পর্যন্তও হতে পারে। সুতরাং ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ আক্রান্ত হবার সাথে সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।
শারীরিক জটিলতাগুলাে হলােঃ
• ত্বকে সংক্রমণ
• নিউমােনিয়া
• মানসিক বিভ্রান্তি
• চোখে প্রদাহ, এমনকি দৃষ্টি শক্তি লােপ পেতে পারে
প্রশ্নঃ কাদের মধ্যে এ রােগের ঝুঁকি বেশী?
উত্তরঃ যাদের ঝুঁকি বেশী/ ঝুঁকিপূর্ণ জনগােষ্ঠীঃ
• নবজাতক শিশু।
• গর্ভবতী নারী
• দুর্বল রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তি (যেমনঃ অনিয়ন্ত্রিত ডায়বেটিস, কিডনি রােগী, ক্যান্সারের রােগী, এইডস-এর রােগী)।
প্রশ্নঃ কোন কোন প্রাণী থেকে এ রােগ ছড়ায়?
উত্তরঃ রােগ ছড়াতে পারে –
• মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত বানর থেকে;
• ইদুর, কাঠবিড়ালি, খরগােশ বর্গের পােষক (Reservoir) -এর মাধ্যমে তবে সাধারণত গৃহপালিত প্রাণী (যেমনঃ গরু, ছাগল, ভেড়া, হাঁস, মুরগী, মহিষ) থেকে এ রােগ ছড়ায় না।
প্রশ্নঃ এ রােগ মানুষ থেকে মানুষে কিভাবে সংক্রমিত হয়?
উত্তরঃ মানুষ থেকে মানুষে যেভাবে সংক্রমণ ঘটে – আক্রান্ত ব্যক্তির
• সরাসরি শারীরিক সংস্পর্শ
• ফুস্কুড়ির রস (vesicle, pustule)-এর সংস্পর্শ
• শরীরের নিঃসরণ (body fluid)-এর সংস্পর্শ
• হাঁচি, কাশির মাধ্যমে (দীর্ঘ সময় সংস্পর্শে থাকলে)
• ব্যবহাৰ্য্য সামগ্রীর সংস্পর্শ।
প্রশ্নঃ এ রােগ থেকে কিভাবে আমরা নিজেকে নিরাপদ রাখতে পারি?
উত্তরঃ এ রােগ থেকে নিজেদেরকে নিরাপদ রাখার উপায়ঃ
• আক্রান্ত ব্যক্তির সরাসরি সংস্পর্শে আসা থেকে বিরত থাকা
• আক্রান্ত ব্যক্তি এবং সেবা প্রদানকারী মাস্ক ব্যবহার করা
• সাবান পানি দিয়ে নিয়মিত হাত ধােয়া (৩০ সেকেন্ড)
• হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা
• আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত দ্রব্যাদি সাবান/ জীবাণুনাশক/ ডিটারজেন্ট দিয়ে জীবাণুমুক্ত করা
• আক্রান্ত জীবিত /মৃত বন্য প্রাণী অথবা প্রাকৃতিক পােষক (যেমন ইঁদুর কাঠবিড়ালি, খরগােশ) থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকা।
প্রশ্নঃ এ রােগ কি বাচ্চাদের হতে পারে?
উত্তরঃ বয়স্কদের তুলনায়, বাচ্চাদের সংক্রমিত হওয়ার আশংকা বেশী।
প্রশ্নঃ এ রােগের কি টিকা আছে?
উত্তরঃ গুটিবসন্তের টিকা, মাঙ্কি পক্সের প্রতি ষেধক হিসাবে অনেকাংশেই কার্যকর হবে। তবে, বিশ্বব্যাপী এ টিকা এখন সহজলভ্য নয়। উল্লেখ্য যে, যারা ইতিপূর্বে গুটিবসন্তের টিকা গ্রহণ করেছেন (১৯৮০ সালে সর্বশেষ গুটিবসন্তের টিকা দেয়া হয় ), তারা মাঙ্কিপক্স সংক্রমণ থেকে অনেকাংশে সুরক্ষিত।
প্রশ্নঃ মাঙ্কিপক্সের চিকিৎসা কি?
উত্তরঃ বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই উপসর্গগুলাে আপনা আপনি উপশম হয়ে যায় বলে নিদিষ্ট চিকিৎসা প্রয়ােজন হয় না। তবে উপসর্গ নিরাম য়ে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হয়। যেমন জ্বর হলে প্যারাসিটামল, ফুস্কুড়ি শুকনাে রাখা, পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ, পরিমিত বিশ্রাম, পর্যাপ্ত পানি ও তরল জাতীয় খাবার গ্রহণ, ইত্যাদি। জটিলতা দেখা দিলে সাথে সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করবেন।
প্রশ্নঃ বিশ্বের কোন কোন দেশে এই রােগ এখন পর্যন্ত সনাক্ত হয়েছে?
উত্তরঃ সর্বশেষ তথ্যমতে ৪৩টি দেশে এ রােগের নতুন প্রাদুর্ভাবের তথ্য পাওয়া গেছে (০৪-০৬-২০২২ পর্যন্ত)। উল্লেখ্য, ১৯৭০ সাল থেকে এ বছরের (২০২২) এপ্রিল পর্যন্ত মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার ১১টি দেশে মাঙ্কিপক্সের পুরােনাে প্রাদুর্ভাব রয়েছে।
প্রশ্নঃ এ রােগটি কি যৌন বাহিত?
উত্তরঃ আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে নিবিড় দৈহিক সম্পর্ক। যৌন মিলনে এ রােগ ছড়াতে পারে।
প্রশ্নঃ মাঙ্কিপক্সে কি একের অধিকবার হতে পারে?
উত্তরঃ সাধারণত হয় না।
বিঃদ্রঃ আক্রান্ত ব্যাক্তির সংস্পর্শে আসলে অথবা আক্রান্ত দেশ থেকে ফেরত আসার ২১ দিনের মধ্যে জ্বর আসলে এবং ফুস্কুড়ি দেখা দিলে আপনার দেহে মাঙ্কিপক্স ভাইরাস সংক্রমণের আশংকা থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে আপনি অতিসত্ত্বর আইইডিসিআর-এর এ হটলাইনে যােগাযােগ করুনঃ ১০৬৫৫
ভালো লাগলে কিন্তু ফেসবুক পেজ এ লাইক দিতে ভুলে জাবেন না।
0 Comments