প্যারাসিটামল ব্যবহারে আপনার শরীলে যে প্রভাব পড়ছে জেনে নিন1

বিস্তারিতঃ জ্বর এবং সামান্য ব্যথার চিকিৎসায় প্যারাসিটামল ব্যবহার করা হয়। নির্ধারিত মাত্রার শরীরের প্যারাসিটামল তাপমাত্রা প্যারাসিটামল মাইগ্রেনের মাথাব্যথা কমায় সামান্য কমায়। কিন্তু মানসিক চাপের জন্য যে আপতিক মাথাব্যথা হয় তা সামান্য কমায়। অপারেশনের পর যে ব্যথা হয় তাতেও প্যারাসিটামল কার্যকর। প্যারাসিটামল যে ব্যথা কমায় তা খুবই সামান্য সন্ধিবাতে এবং তুচ্ছ। কোমরের ব্যথায়, ক্যান্সারের ব্যথায় ও স্নায়ুবিক ব্যথায় প্যারাসিটামল ব্যবহারের পক্ষে যে যুক্তি তা অপর্যাপ্ত।

সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য প্যারাসিটামলের পার্শ্ব- প্রতিক্রিয়া হল বমি বমি ভাব এবং পেটে ব্যথা। দীর্ঘদিন প্যারাসিটামল খাওয়ার ফলে রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে যেতে পারে যা নির্দেশ করে সম্ভাব্য খাদ্যনালীর রক্তক্ষরণ এবং লিভারের অস্বাভাবিক কার্যকারিতা। উচ্চ মাত্রার প্যারাসিটামল খেলে মৃত্যুহার বেড়ে যায় এবং হৃদযন্ত্র ও রক্তনালী (স্ট্রোক, হৃৎপেশীর ক্ষয়), খাদ্যনালী (আলসার, রক্তক্ষরণ) এবং কিডনীর অস্বাভাবিক কার্যকারিতা বেড়ে যায়। এই ঔষধ উচ্চ রক্তচাপ তৈরীর ঝুঁকি বাড়ায়। এতে অ্যাজমা বৃদ্ধি পায়।

একজন প্রাপ্ত বয়স্ক লোকের জন্য সর্বোচ্চ ঔষধের মাত্রা ৩-৪ গ্রাম সুপারিশ করা হয়। উচ্চ মাত্রার ঔষধ ব্যবহারে বিষাক্ততা দেখা দেয় এমন কি লিভারের অকৃতকার্যতা দেখা দিতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অত্যাবশ্যকীয় ঔষধের মধ্যে এটা রয়েছে।

ঔষধের ব্যবহার

জ্বর: জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামল সবচেয়ে পছন্দের ঔষধ।
ব্যথা: প্যারাসিটামল মৃদু ব্যথা উপশমের জন্য ব্যবহার করা হয় যেমন মাথাব্যথা, মাংশপেশী ব্যথা, সামান্য সন্ধিপ্রদাহের ব্যথা, দাঁতের ব্যথা এবং ঠাণ্ডা, ফ্লু, মচকানো ও যন্ত্রণাপূর্ণ মাসিক ঋতুস্রাবের যে ব্যথা সেখানে ব্যবহার করা হয় ।

পেশী ও অস্থিসম্বন্ধীয় ব্যথা: পেশী ও অস্থিসম্বন্ধীয় ব্যথা, যেমন অস্টিওআর্থ্রাইটিস এবং পৃষ্ঠ বেদনায় প্যারাসিটামলের উপকার অনিশ্চিত। অস্টিওআর্থ্রাইটিসে এটা সামান্য কাজ করে এবং এর উপকার তাৎপর্যপূর্ণ নয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এটা অকার্যকর। যারা এনএসএআইডি (NSAID) ঔষধ ব্যবহার করতে পারেন না তাদের বেলায় আপতিক ক্ষেত্রে স্বল্প সময়ের জন্য প্যারাসিটামল ব্যবহার করা যায়। যারা নিয়মিত প্যারাসিটামল সেবন করেন তাদের বেলায় নিয়মিত লিভারের বিষাক্ততা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। কোমরের তীব্র ব্যথাতে প্যারাসিটামল কার্যকর নয়। দীর্ঘমেয়াদি কোমরের ব্যথায় ও স্নায়ুমূলের ব্যথায় এটা কার্যকর নয়।

মাথাব্যথা: তীব্র মাইগ্রেনে প্যারাসিটামল কার্যকর। প্যারাসিটামল ও ক্যাফিন সংযুক্ত অবস্থায় খুবই কার্যকর এবং এটা মাইগ্রেনে প্রথম সারির ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যে সব রোগী প্রায়ই মানসিক চাপজনিত মাথাব্যথায় ভোগেন তাদের বেলায় প্যারাসিটামল সামান্য পরিমাণে কাজ করে। মানসিক চাপজনিত মাথাব্যথায় প্যারাসিটামল ও ক্যাফিনের সংযুক্তি শুধুমাত্র প্যারাসিটামলের চেয়ে কাজ করে বেশী। এ জন্য প্যারাসিটামল ও ক্যাফিনের সংযুক্তিকে প্রথম পছন্দের ঔষধ হিসেবে ধরা হয় আর শুধু প্যারাসিটামলকে দ্বিতীয় সারির ঔষধ হিসেবে পছন্দ করা হয়।

দত্ত সম্বন্ধীয় এবং সার্জারীর পরবর্তী ব্যথা: দাঁতের অস্ত্রোপচারের পর যে ব্যথা হয় সেটিকে বেদনানাশক ঔষধের কার্যকারিতার একটি আদর্শ রূপে দেখা যেতে পারে। এই ধরনের ব্যথা উপশমে প্যারাসিটামল আইবুপ্রোফেনের চেয়ে কম কাজ করে। এনএসএআইডি (NSAID) যেমন আইবুপ্রোফেন, ন্যাপ্রক্সেন কিংবা ডাইক্লোফিনাক এর আরোগ্যকর পূর্ণ মাত্রার ঔষধ প্যারাসিটামল ও ক্যাফিনের সংযুক্তির চেয়ে বেশী কার্যকর।

অন্যান্য ব্যথা: ক্যান্সারের ব্যথা ও স্নায়ুর ব্যথা প্যারাসিটামলে কমে কি না এ ব্যাপারে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ নেই। তীব্র ব্যথার জন্য শিরার ভেতর প্যারাসিটামল দিলে কতটুকু কার্যক্ষম তারও বেশী প্রমাণ নেই। তীব্র ব্যথার ক্ষেত্রে প্যারাসিটামলের সাথে ক্যাফিনের সংযুক্তি শুধু প্যারাসিটামলের চেয়ে বেশী কার্যকর।

পেটেন্ট ডাকটাস প্যারাসিটামল আর্টারিওসাস: পেটেন্ট ইনডোমিথাসিনের মত কার্যকর কিন্তু আর্টারিওসাসের নালী বন্ধ করতে সাহায্য ডাকটাস করে। এটি আইবুপ্রোফেন বা ইনডোমিথাসিনের মত কার্যকর কিন্তু

প্রতিকূল কার্যকারিতা

খাদ্যনালীতে প্রতিকূল কার্যকারিতা বলতে বমি ৰমি ভাব ও পেটের ব্যথা বোঝায় যা আইবুপ্রোফেনের মতই ঘটে থাকে। এই ঔষধ বিরল কিন্তু মারাত্মক চর্ম প্রতিক্রিয়া যেমন স্টিভেন জনসন সিনড্রোম এবং টক্সিক ইপিডারমাল নেক্রোলাইসিস করতে পারে। অতিরিক্ত মাত্রার প্যারাসিটামল খেলে খাদ্যনালী থেকে রক্তক্ষরণ হতে পারে, হার্ট অ্যাটাক কিংবা স্ট্রোক হতে পারে, কিডনীর ক্ষতি হতে পারে এমন কি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। প্যারাসিটামল নিয়মিত খেলে পেপটিক আলসারের আশঙ্কা বেড়ে যায়। অতিরিক্ত মাত্রা বলতে প্রতিদিন ২-৩ গ্রামের বেশী বুঝায়। অতিরিক্ত মাত্রার প্যারাসিটামল লিভারের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর, লিভার ফেইলুর হতে পারে সেক্ষেত্রে লিভার ট্রান্সপ্লানটেশন লাগতে পারে। প্যারাসিটামল দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহার করলে উচ্চ রক্তচাপ ও নাড়ীর গতি বাড়তে পারে।

গর্ভকালীন সময়ে ব্যবহার: গর্ভকালীন প্ৰথম তিন মাসে প্যারাসিটামল ব্যবহার করলে মায়ের কোন ক্ষতির আশংকা নেই বা বাচ্চার কোন বিকৃতির আশংকা নেই। তবে, গর্ভকালীন সময়ে দীর্ঘমেয়াদে প্যারাসিটামল ব্যবহার করলে বাচ্চার অ্যাজমা, বর্ধনে সমস্যা এবং ভবিষ্যতে জন্মদানে সমস্যা হতে পারে। গর্ভকালীন সময়ে প্যারাসিটামল ব্যবহার করলে বাচ্চার শৈশবকালে অ্যাজমা দেখা দিতে পারে। সবার ঐক্যমতে সুপারিশ হলো গর্ভকালীন সময়ে দীর্ঘমেয়াদে প্যারাসিটামল ব্যবহার পরিহার করতে হবে এবং যখন এর প্রয়োজন পড়বে শুধু তখন এটা ব্যবহার করতে হবে, সর্বনিম্ন মাত্রায় এবং স্বল্প সময়ের জন্য।

অতিমাত্রা

প্যারাসিটামলের সুপারিশকৃত সর্বোচ্চ মাত্ৰা প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ গ্রাম। অতিমাত্রায় প্যারাসিটামল সেবন করলে মারাত্মকভাবে লিভারের ক্ষতি হতে পারে। অনেকে বিনোদনের জন্য ওপিঅয়েড ঔষধ ব্যবহার করে থাকে। এই ওপিঅয়ডের সাথে ফলে থাকে। প্যারাসিটামল সংযুক্ত প্যারাসিটামলের অতিমাত্রা দেখা যায়। যারা প্রায়ই এলকোহল সেবন করে তাদের ক্ষেত্রে অতিমাত্রার ঝুঁকি বেশি। প্যারাসিটামল অতিমাত্রায় যদি চিকিৎসা না করা হয় তবে দীর্ঘমেয়াদি বেদনাদায়ক অসুখ দেখা দিতে পারে। প্যারাসিটামল বিষাক্ততার লক্ষণ প্রথম দিকে নাও দেখা দিতে পারে অথবা সুনির্দিষ্ট নয় এমন লক্ষণ দেখা দিতে পারে। প্যারাসিটামল খাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর অতিমাত্রার লক্ষণ দেখা দেয় যেমন বমি বমি ভাব, বমি, ঘাম, এবং ব্যথা যখন লিভার ফেইলুর শুরু হয়।

যে সব লোক অতিমাত্রায় প্যারাসিটামল সেবন করে তারা সহজে ঘুমাতে পারে না অথবা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে যদিও যারা আত্মহত্যার জন্য এই ঔষধ খেয়ে থাকে তারা ভুলক্রমে মনে করে থাকে যে ঔষধ খাওয়ার পর তারা অজ্ঞান হয়ে যাবে চিকিৎসার উদ্দেশ্য হলো শরীর থেকে প্যারাসিটামল সরিয়ে ফেলা এবং গ্লুটাথিয়ন দ্বারা পূরণ করা। অতিমাত্রায় প্যারাসিটামল খাওয়ার পর পরই যদি রোগী হাসপাতালে চলে আসে তবে সক্রিয় কাঠকয়লা ব্যবহার করে এর শোষণ কমানো যায়। এসিটাইলসিস্টিন রোগ- প্রতিরোধ ঔষধ হিসাবে ব্যবহার করা হয় যা গ্লুটাথিয়নের অগ্রদূত হিসেবে কাজ করে এবং শরীরকে সাহায্য করে প্রচুর পরিমানে গ্লুটাথিয়ন উৎপাদন করতে যাতে এটা লিভারের ক্ষতিকে বাধা দিতে পারে বা কমাতে পারে; যদি লিভারের বেশি ক্ষতি হয় তবে লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করতে হয়। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে কিডনীর অকৃতকার্যতা দেখা দিতে পারে।

ঔষধের শোষণ, সংবহন ও নিঃসরণ

মুখে খাওয়ার পর প্যারাসিটামল খুব দ্রুত ক্ষুদ্রান্ত্র থেকে শোষণ হয় যখন পাকস্থলী থেকে শোষণ খুবই নগণ্য। অতএব, পাকস্থলী খালি হওয়ার উপর নির্ভর করে প্যারাসিটামল কতটা শোষিত হবে। খাবার পাকস্থলীর খালি হওয়া এবং শোষণ বিলম্বিত করে কিন্তু শোষণের মোট পরিমাণ ঠিকই থাকে। খালিপেটে প্যারাসিটামল খেলে রক্তে সর্বোচ্চ ঘনত্ব আসে ৯০ মিনিটের মধ্যে। উচ্চ মাত্রার শর্করা, রক্তের সর্বোচ্চ ঘনত্বকে চার গুণ কমিয়ে দেয়।
প্যারাসিটামলের বিপাক প্রধানত লিভারে হয়ে থাকে এবং বিপাকের ফলে উৎপন্ন দ্রব্য প্রস্রাবের সাথে বের হয়ে যায়। মাত্র ২-৩% প্যারাসিটামল অপরিবর্তিত অবস্থায় প্রস্রাবের সাথে বের হয় ৷
প্যারাসিটামল প্রথম আবিস্কার হয় ১৮৫২ সালে। প্যারাসিটামল একটি বেদনানাশক ঔষধ যার পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া কম এবং যা অন্যান্য ঔষধের সাথে খুব কমই বিক্রিয়া করে থাকে। প্যারাসিটামল একটি পারিবারিক ঔষধে পরিণত হয়েছে।

প্রাপ্যতা

প্যারাসিটামল মুখে, শিরার মধ্যে এবং পায়ুপথে ব্যবহার করা যায়। প্যারাসিটামল অনেক সময় ক্যাফিনের সাথে সংযুক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়।

আমাদের এই ছোট আয়োজনটি কেমন লেগেছে তা কমেন্ট করে জানান। ধন্যবাদ।

ভালো লাগলে কিন্তু ফেসবুক পেজ এ লাইক দিতে ভুলে জাবেন না।
আরো তথ্য পেতে ভিজিট করুন.