Shishu Kishorder Asokti Jokhon Internet

বাংলাদেশসহ সমগ্র পৃথিবীতে মাদকাসক্তির মতোই ইন্টারনেট আসক্তি যেন গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। সাধারণত মানসিকভাবে অপরিপক্ক উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজগামী শিক্ষার্থীরাই এই সমস্যায় বেশি আক্রান্ত হয়।

১ জুন বিশ্ব শিশু দিবস

ইন্টারনেটের বদৌলতে সমগ্র পৃথিবী যেন সমাজে এর উপকারী ভূমিকা এতই ব্যাপক যে, তা এই স্বল্পপরিসরে বর্ণনা করা প্রায় অসম্ভব। মূলত তথ্যপ্রাপ্তি, শিক্ষা, সামাজিক যোগাযোগ, গবেষণা ও বিনোদনের এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী মাধ্যম এই ইন্টারনেট। এর ওপর আধুনিক মানব সমাজের এই নির্ভরশীলতার বাধ্যবাধকতার ফলে আমাদের হৃদয়ের মণিকোঠায় প্রতিনিয়তই প্রতিধ্বনিত হয় কবির সেই বিখ্যাত উক্তি- ‘কত অজানারে জানাইলে তুমি, কতজনে দিলে ঠাঁই। দূরকে করিলে নিকট বন্ধু, পরকে করিলে ভাই।

আবার প্রতিটি মঙ্গল প্রদীপের নিচেই যেমন কিছু অন্ধকার থাকে, তেমনি ইন্টারনেট প্রযুক্তির ব্যবহারেরও রয়েছে কিছু সীমাবদ্ধতা তথা ক্ষতিকারক প্রভাব। ইন্টরনেটের তেমনি এক ক্ষতিকারক প্রভাবের নাম এর প্রতি তীব্র আসক্তি। ইন্টারনেটের অযাচিত ও অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের ফলে মানুষ এর প্রতি তীব্রভাবে হয়ে পড়ে আসক্ত। তার মেধা-মনন ও চিন্তা- চেতনার সব কিছু আচ্ছন্ন থাকে ইন্টারনেটের ভার্চুয়াল কালো মেঘে। এর প্রতি সঙ্গনিরোধের সব প্রচেষ্টা যেন হয় ব্যর্থ। শিক্ষাগত, পারিবারিক ও সামাজিক দায়দায়িত্ব পালনের চেয়ে ইন্টারনেটের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারই হয়ে ওঠে অত্যাবশ্যকীয়।

Shishu Kishorder Asokti Jokhon Internet

শিক্ষাগত জীবনে নেমে আসে ব্যর্থতা। পারিবারিক ও সমাজ জীবনে দেখা দেয় নানা টানাপড়েন। কর্মক্ষেত্রে নেমে আসে স্থবিরতা। দাম্পত্যজীবনে সম্পর্ক ছেদ তথা বিবাহবিচ্ছেদ, কর্মক্ষেত্রে চাকরিচ্যুতি যেন ইন্টারনেট আসক্তদের মধ্যে অতি সাধারণ ব্যাপার। আক্রান্ত ব্যক্তির অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দেখা যায় ব্যাপক দৈন্যদশা। আসক্ত ব্যক্তির জীবনে দেখা দেয় একাকিত্ব ও হতাশা। শারীরিক দিক থেকে আসক্ত ব্যক্তিদের একটি বড় অংশই নিদ্রাহীনতা, স্থূলতা, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, কোমর ব্যথাসহ প্রভৃতি এক বা একাধিক রোগে আক্রান্ত হতে পারে। আসক্তির আতিশয্যে আক্রান্ত ব্যক্তি কর্তৃক আত্মহত্যা কিংবা খুন করার মতো ঘটনাও বিরল নয়।

বর্তমানে বাংলাদেশসহ সমগ্র পৃথিবীতে মাদকাসক্তির মতোই ইন্টারনেট আসক্তি যেন গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। সাধারণত মানসিকভাবে অপরিপক উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজগামী শিক্ষার্থীরাই এই সমস্যায় বেশি আক্রান্ত হয়। এক জরিপে দেখা যায়, শতকরা ২.১ ভাগ দক্ষিণ কোরিয়ার ও ১৩.৭ ভাগ চীনা তরুণ-তরুণী এ সমস্যায় আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে এই সমস্যায় আক্রান্তদের শতকরা হার যথাক্রমে ১.৫ ও ৮.২ ভাগ। বাংলাদেশে এই সমস্যার ব্যাপকতা সম্পর্কে এখন পর্যন্ত ব্যাপক কোনো জরিপ করা হয়নি।

তথাপি ২০১৫ সালে নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির ৪০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে করা এক সংক্ষিপ্ত জরিপে দেখা যায়, অংশগ্রহণকারীদের শতকরা ২৫.৩ ভাগ ইন্টারনেটের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল। তা ছাড়া, ২০১৬ সালে পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশে বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৬০ মিলিয়ন ও মোবাইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। আর এই ব্যবহারকারীদের শতকরা ৩৫ ভাগই সদ্য বয়ঃপ্রাপ্ত কিংবা উঠতি তরুণ-তরুণী। কাজেই আমাদের দেশে এই সমস্যা যে নিকট ভবিষ্যতে মহামারী রূপ ধারণ করবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

Shishu Kishorder Asokti Jokhon-Internet

মূলত ইন্টারনেটের এই অযাচিত ও অপব্যবহারের ফলে আজ বিশ্বব্যাপী যৌনাচার, নোংরামি, ভার্চুয়াল সম্পর্ক, কম্পিউটার খেলা, তথ্যপ্রাপ্তি, অনলাইন জুয়া প্রভৃতির প্রতি অতিমাত্রায় আসক্তি আজ যেন এক বৈশ্বিক রূপ পেয়েছে। নতুন প্রযুক্তির প্রতি তীব্র কৌতূহল, শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত শৈশব ও কৈশোর, নানা সামাজিক ও পারিবারিক টানাপড়েন, মাদকাসক্তি, নৈতিক অবক্ষয়, একাকিত্ব, উপর্যুক্ত সামাজিক ও পারিবারিক সাপোর্টের অভাব, ব্যক্তির আচরণগত সমস্যা, ইন্টারনেটের সহজপ্রাপ্যতা, সঙ্গদোষ, ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রতি পারিবারিক ও রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের অভাব প্রভৃতি এই সমস্যার বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হিসেবে কাজ করে।

ইন্টারনেট আশীর্বাদ না অভিশাপ- এই তর্কে না গিয়ে ইন্টারনেটের নিয়ন্ত্রিত ও যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার পাশাপাশি ইন্টরনেট আসক্তির এই ব্যপকতা নিয়ন্ত্রণে নিম্নলিখিত ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। পরিবারই আমাদের জীবনের প্রথম পাঠশালা। আবার পরিবার তথা পিতামাতার যথাযথ সান্নিধ্যের অভাব আবার নানা পারিবারিক টানাপড়েন এই সমস্যার অন্যতম নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। তাই পিতামাতাকে সুস্থ পারিবারিক পরিবেশ নিশ্চিত করার পাশাপাশি সন্তানকে যথেষ্ট সময় দেয়া ও নৈতিক শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে এ সমস্যা অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। সেই সাথে সমাজ তথা শিক্ষাজীবনে নৈতিক শিক্ষার প্রচলন, সুস্থ বিনোদনের পরিবেশ, ইন্টারনেটের পরিকল্পিত ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

Shishu Kishorder Asokti Jokhon Internet

ইন্টারনেটের ব্যবহার যাতে অনিয়ন্ত্রিত ও অপরিকল্পিত না হয়, সে ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ তথা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি বাড়াতে হবে। আবার হতাশা, মাদকাসক্তি, উদ্বিগ্নতা প্রভৃতি মানসিক রোগ যেহেতু এ সমস্যা সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, তাই এসব রোগ নির্ণয়পূর্বক যথাযথ চিকিৎসা একান্ত প্রয়োজন। সেই সাথে ইতোমধ্যে ইন্টারনেট আসক্ত ব্যক্তিদের জন্য নিশ্চিত করতে হবে নানা মনোসামাজিক সাপোর্টের পাশাপাশি উপযুক্ত চিকিৎসা। এ ক্ষেত্রে একজন মনোচিকিৎসক গুরুত্বপূর্ণ পথ প্রদর্শক হতে পারেন। রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইন্টারনেটে যৌনতা, জুয়া ও আসক্তি সৃষ্টিকারী খেলা তৈরি ও প্রচারের সাথে জড়িত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ সময়ের দাবি।

এ ছাড়া, সরকারের পাশাপাশি নানা ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া ইন্টারনেট আসক্তির বিরুদ্ধে ননা প্রতিবেদন ও অনুষ্ঠান প্রচারের মাধ্যমে ব্যাপক জনমত সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

Shishu Kishorder Asokti Jokhon-Internet

ভালো লাগলে কিন্তু ফেসবুক পেজ এ লাইক দিতে ভুলে জাবেন না।
আরো তথ্য পেতে ভিজিট করুন.