ভাষানুযায়ী নাম
বাংলা
: জিরা
আরবী: কমুন আবিয়াজ
হিন্দী: জিরা

পরিচিতি:
প্রাচীনকাল থেকে রান্নার স্বাদ ও ঘ্রাণ বাড়াতে জিরা ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটি মূলত মশলা হিসেবে ব্যবহৃত হলেও এর রয়েছে অনন্য ঔষধি গুণ। এর গাছ ২ থেকে ৩ ফুট লম্বা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনেক শাখা প্রশাখাবিশিষ্ট হয়ে থাকে। পাতা পক্ষাকার আর ফুলের পাপড়ি ছোট ছোট অসমান হয়ে থাকে। জিরা ইরান, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে ব্যাপক চাষ হয়। আমাদের দেশেও পরীক্ষামূলক জিরা চাষ শুরু হয়েছে। জিরা বন্য স্বাদ ও সুঘ্রাণ যুক্ত।

মাত্রা:
জিরা ২ থেকে ৭ গ্রাম পর্যন্ত সেবন করা যায়।

পুষ্টি উপাদান:
প্রতি ১০০ গ্রাম জিরাতে রয়েছে- এনার্জি ১৫৫৭ কিছু, শর্করা ৪৪.২৪ গ্রাম, স্নেহ পদার্থ 22.27 গ্রাম, প্রোটিন ১৭.৮১ গ্রাম, বিটাক্যারোটিন ৭৬২ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন এ ১২৭০ আইইউ, থায়ামিন ০.৬২৮ মিগ্রা., রিবোফ্লাভিন ০.৩২৭ মিগ্রা., নায়াসিন ৪.৫৭৯ মিগ্রা., ভিটামিন বি৬ : ০.৪৩৫. মিগ্রা., ফোলেট : ১০ মাইক্রোগ্রাম, কোলিন : ২৪.৭ মিগ্রা., ভিটামিন সি : ৭.৭ ,

ভিতামিন-ই: ৩.৩৩ মিগ্রা.,
ভিটামিন কে: ৫.৪ ৩. মাইক্রোগ্রাম,
ক্যালসিয়াম: ৯৩১ মিগ্রা.,
আয়রন: ৬৬.৩৬ মিগ্রা.,
ম্যাগনেসিয়াম: ৯৩১ মিগ্রা.,
ম্যাঙ্গানিজ: ৩.৩৩ মিগ্রা.
ফসফরাস: ৪৯১ মিগ্রাম,
পটাশিয়াম: ১৭৮৮ মিগ্রা.,
সোডিয়াম: ১৬৮ মিগ্রা.,
জিংক: ৪.৮ মিগ্রা., এ ছাড়াও উদ্বায়ী তেল হিসেবে কিউমিনালডিহাইড, সাইমিন, টারপিনয়েড এবং অন্যান্য উপাদান হিসেবে গামা- টারপিলিন, স্যাফ্রান্যাল, প্যারা-সাইমিন ও বিটা-পাইলিন রয়েছে।

উপকারিতা:
১. হজমশক্তি বৃদ্ধি ও পেট ব্যাথায় উপকারি:
জিরা হজমশক্তি বৃদ্ধি করে। পাকস্থলী ও অন্ত্রনালীর শক্তি বৃদ্ধি করে পেট ফাঁপা ও বায়ুজনিত পেট ব্যথা নিরাময় করে। নিয়মিত জিরা ভিজানো পানি পানে উল্লেখিত সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

২. কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে:
জিরাতে প্রাকৃতিক আঁশ রয়েছে, যা অন্ত্রের বাওয়েল মুভমেন্ট ঠিক রেখে কোষ্ঠ পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।

৩. প্রদাহ রোধ করে:
শরীরের আঘাতজনিত ব্যথা, আর্থাইটিস এবং এলার্জির প্রদাহ নিরাময়ে জিরা কাজ করে।

৪. রক্তস্বল্পতা দূর করে:
জিরায় রয়েছে প্রাকৃতিক আয়রণ। তাই নিয়মিত জিরা সেবনে রক্তস্বল্পতা দূর হয়।

৫. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়:
জিরাতে আছে ভিটামিন সি, তাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে জিরার ভূমিকা রয়েছে।

৬. শরীর থেকে টক্সিন দূর করে:
জিরার রয়েছে কিউমিনালডিহাইড, ফসফরাস ও থায়মল যা শরীর থেকে টক্সিন দূর করে।

৭. চুলপড়া কমায়:
প্রাকৃতিকভাবেই জিরাতে রয়েছে অনেক পুষ্টিকর উপাদান যা চুলের গোড়া শক্ত করে চুল পড়া রোধ করে।

৮. খাবার থেকে সৃষ্ট রোগ প্রতিরোধ করে:
জিরায় আছে অ্যান্টিমাইক্রবিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান যা গোশতসহ খাবারে থাকা ক্ষতিকারক জীবাণু ধ্বংস করতে সাহায্য করে।

৯. মূত্রবর্ধক:
জিরার রয়েছে মূত্রবর্ধক গুণ, যা মূত্রাশয়কে শক্তিশালী করে। এর ফলে মূত্রাশয় ও মুত্রনালীর পাথর অপসারণে জিরা সাহায্য করে।

১০. মাতৃদুগ্ধবর্ধক:
যেসব মায়েদের পর্যাপ্ত বুকের দুধ হয় না তারা নিয়মিত জিরা সেবনে বুকের দুধ বৃদ্ধি পায়।

১১. নিদ্রাকারক:
যাদের রাতে ভালো ঘুম হয় না, তারা নিয়মিত পাকা কলার সাথে ১/২ চামচ জিরা গুঁড়া নিয়মিত সেবন করলে মস্তিষ্কে মেলাটোনিন নামক হরমোন বৃদ্ধি পায়, যা ভালো ঘুমের জন্য উপকারী।

১২. ওজন কমাতে সাহায্য করে:
দুই চামচ জিরা ২০০ মিলি পানিতে জ্বাল দিয়ে ছেকে নিয়মিত মধুসহ খালিপেটে সেবন করলে ওজন কমাতে সাহায্য করে।

১৩. কোলেস্টেরল:
এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৬০ দিন যারা নিয়মিত জিরা সেবন করেছে, তাদের শরীরে ক্ষতিকারক কোলেস্টেরলের পরিমাণ প্রায় ১০ শতাংশ কমেছে।

জিরা ব্যবহৃত বাজারে প্রচলিত কিছু ঔষধ এর নাম ক্রিয়া ও মাত্রা:

১. ক্যাপসুল এপিক্যাপ:
ক্রিয়া: পাকস্থলীর দুর্বলতা, হজমের দুর্বলতা, ক্ষুধামন্দা ও যকৃতের গোলযোগ।
মাত্রা: প্রাপ্ত বয়স্ক এবং ছয় বছরের বেশি বয়স্ক শিশুদের ক্ষেত্রে ১-২ – ২টি করে ক্যাপসুল, দিনে ২-৩ বার সেব্য।

২. ট্যাবলেট সিনাস্লিম:
ক্রিয়া
: দৈহিক স্থূলতা, মেদ ও পেটের চর্বি।
মাত্রা: ২টি করে ট্যাবলেট দৈনিক ২-৩ বার ৪ থেকে ৬ মাস সেব্য।

৩. সিরাপ টিফসল:
ক্রিয়া
: অজীর্ণ, পেটফাঁপা, ডায়রিয়া, আমাশয় এবং শিশুদের দন্তোৎগমকালীন উপসর্গে কার্যকর।
মাত্রা: শিশু— ৪ মাস পর্যন্ত ১০-২০ ফোঁটা দিনে ৩-৪ বার এবং তদূর্ধ্ব বয়সে ২.৫-১০ মিলি দিনে ৩-৪ বার সেব্য।

৪. জাওয়ারিশ কমুনী:
ক্রিয়া
: অম্লাধিক্য, হিক্কা, পেট ফাঁপা, কোষ্ঠকাঠিন্য, অণ্ডকোষে জল সঞ্চয় ও হার্নিয়া।
মাত্রা: ৫-১০ গ্রাম করে দৈনিক ১- ২ বার আহারের পর সেব্য।

ভালো লাগলে কিন্তু ফেসবুক পেজ এ লাইক দিতে ভুলে জাবেন না।
আরো সাস্থ্য সম্পর্কে জানতে ভিজিট করুন.