মৌসুমি ফল ফলাদির উপকারীতা
Mousumi Fol Foladir Upokarita

মৌসুমি ফল মহান আল্লাহ তায়ালার এক অফুরন্ত নেয়ামত যা তিনি আবহাওয়া ও জলবায়ুর উপযোগী করে মানুষসহ বিভিন্ন প্রাণিকূলের জন্য বর্ণ, গন্ধ, স্বাদ এবং পুষ্টিগুণে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। আর তাই এসব মৌসুমি ফল- ফলাদি স্থানীয়ভাবে সংশ্লিষ্ট এলাকার জনগোষ্ঠীর জন্য বেশি স্বাস্থ্যসম্মত ও কার্যকর।

বর্তমানে আমাদের দেশে উৎপাদিত এসব রঙিন ফলে বিদ্যমান লাইকোপেন আর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের ভেতরের বিষাক্ত জিনিস দূর করে এবং ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করে। এসব ফল-ফলাদি খাদ্যের উৎস দেহের পুষ্টির অভাব পূরণ, রোগ প্রতিরোধের জন্য বেশি বেশি গ্রহণ করা আবশ্যক। মৌসুমি ফল-ফলাদিগুলো গ্রহণের উল্লেখযোগ্য কারণগুলো হলো-

Mousumi Fol Foladir Upokarita

১. দেশি মৌসুমি ফল আলাদাভাবে প্রসেস করার দরকার হয় না। এগুলো সাধারণত স্বাভাবিক গতিতে প্রাকৃতিক ভাবেই পেঁকে থাকে। স্থানীয়দের জন্য দীর্ঘদিন সংরক্ষণেরও প্রয়োজন পড়ে না। এজন্য এতে ক্ষতিকারক কেমিক্যাল ব্যবহারের দরকার হয় না। মৌসুমি ফলে স্বাদ ও গন্ধ থাকে বৈশিষ্টপূর্ণ। এসব ফল সতেজ অবস্থায় গ্রহণ করা যায় এবং হজম প্রক্রিয়ায় কোনো ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করে না।

. যারা সচেতন নাগরিক তারা বিভিন্ন ক্ষতিকারক রাসায়নিক ব্যবহারের কারণে সাচ্ছন্দে ফল খেতে সঙ্কোচবোধ করেন, তাদের জন্য মৌসুমি ফল নিরাপদ। তারা এসব বাহারি ফলের উপকারীতা নিঃসন্দেহেই গ্রহণ করতে পারেন।

৩. স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় পাকানো অর্থাৎ গাছপাকা ফল পরিপক্ক হয়। এসব ফলে খাদ্য ও পুষ্টি উপাদান, সুনির্দিষ্ট ভিটামিন ও মিনারেল ও এনজাইম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টযুক্ত উপাদান পরিপূর্ণ মাত্রায় থাকে। বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন-এ, সি, ই, লাইকোপেন, লুটেইন সেলেনিয়ামসহ বিভিন্ন মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টসগুলো মৌসুমি এসব রঙিন ফলে বিদ্যমান থাকে।

যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর ফ্রি রেডিক্যালের সঙ্গে লড়াই করে দেহের কোষগুলোকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। প্রচুর পরিমাণে এতে ফুড ফাইবার বা খাদ্য তন্তু থাকে যা কোলন ক্যান্সার রোধেও বেশ সক্রিয় ভূমিকা রাখে। ফলে দেহের ক্ষয়পূরণ ও পুষ্টির অভাব পূরণ এবং রোগ প্রতিরোধ সহজ করার জন্য নিয়মিত এসব ফল খাওয়া উপকারি।

. অধিকাংশ মৌসুমি ফল ফলা দিতে অ্যান্টি-ভাইরাল, অ্যান্টি মাইকোবিয়াল গুণও রয়েছে। এগুলো দেহের
পুষ্টি সাধনের সাথে সাথে ইম্যুইন বোস্টিং হিসেবে দেহের রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। একই সাথে এগুলো দেহকে জীবাণুর সংক্রমণের ঝুঁকিমুক্ত রাখে। এসব ফল-ফলাদি ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন ধরনের সিজনাল সিকনেস বা মৌসুমি অসুখ দূর করতে উপকারি।

. মৌসুমি ফল বেশ সাশ্রয়ী, এগুলো খরচ কমানোর ক্ষেত্রেও কার্যকরী। আলাদা কোনো আমদানি খরচ নেই বলে তা দামের উপর বাড়তি প্রভাব ফেলে না। দেশজ ফল হিসেবে এসব ফলের মূল্য তুলনামূলক কম থাকে। স্থানীয়ভাবে জলবায়ু ও মাটির গুণাগুণের কারণে আমাদের দেশী এসব ফলে পুষ্টিও বেশি পরিমাণে থাকে।

. মৌসুমি ফল সহজলভ্য এবং সাধারণ জনসাধারণের ক্রয়ের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুদ থাকে। এসব ফলের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এগুলো রান্না করতে হয় না। আর সব ফলের মধ্যে প্রাকৃতিকভাবেই পানির ভারসাম্য যথাযথ পরিমাণে থাকে।

Mousumi Fol Foladir Upokarita

সেই কারণে গরমের সময় শরীরের আর্দ্রতার ভারসাম্য ঠি রাখতে এবং পানিশূন্যতা পূরণে এগুলো চাৎকারভাবে সহায়তা করে। সতেজ অবস্থা খাওয়া যায়, ফলে এর ভিটামিন ও অন্যান্য তাপমাত্রা সংবেদনশীল ভিটামিন খনিজলবণ এবং মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টসগুলো নষ্ট হয় না।

গ্রীষ্মকালে বিভিন্ন ধরনের রসালো ও সুমিষ্ট, সুগন্ধিযুক্ত, বর্ণিল নানা পদের বাহারি – ফলাদির সমাহার দেখা যায়। এজন্য আমাদের দেখে জ্যৈষ্ঠ মাসকে বলা হয় মধু মাস। বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালে পাওয়া যায় এমন মৌসুমি ফলের মধ্যে অন্যতম হলো- কাঁঠাল, লিচু, আম, জাম, তরমুজ, জামরুল, লটকন, ডেউয়া, গাব, আতাফল, কাউফল, আনারস, তাল (শাঁস) ইত্যাদি। ইতিমধ্যে এগুলোর অধিকাংশ ফলেরই দেখা মিলেছে বাজারে।

মৌসুমি এসব ফল বেশ সুস্বাদু এবং পুষ্টিগুণেও অনন্য। ভ্যাপসা গরমে একঘেয়েমি বা ক্লান্তি কাটাতে এসব ফলের জুড়ি মেলা ভার। বয়স, শারীরিক অবস্থা ও রোগভেদে নিয়মিত ও সঠিক মাত্রায় ফল খেলে তা শারীরিক অনেক রোগব্যাধির জন্য তা আরোগ্য হিসেবে কাজ করে।

দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সমৃদ্ধ ফল-ফলাদি খেতে হবে সঠিক মাত্রায়। তাই সামর্থানুযায়ী মৌসুমি যেকোনো ফল প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় যুক্ত করা আবশ্যক। তবে মিষ্টফল গ্রহণের ক্ষেত্রে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের অবশ্যই সাবধানতা ও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

ভালো লাগলে কিন্তু ফেসবুক পেজ এ লাইক দিতে ভুলে জাবেন না।
আরো সাস্থ্য সম্পর্কে জানতে ভিজিট করুন.