Esobguler Joto Bebohar

Esobguler Joto Bebohar

প্রিয় পাঠকবৃন্দ আজকে আমরা জানবো ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার সঠিক নিয়ম এবং এর বহুমুখী উপকারিতা। আমরা বেশির ভাগ মানুষ মনে করি ইসবগুলের ভুসি শুধুমাত্র কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে কিন্তু আপনারা জেনে অবাক হবেন ইসবগুলের ভুসি আরো ৭ থেকে ৯টি রোগের উপকারে কার্যকর, যেমন গ্যাস্ট্রাইটিস বা এসিডিটি থেকে মুক্ত হতে পারেন, ডায়েরিয়া দূর করতে পারে, করোনারী হার্ট ডিজিস দূর করতে পারে এবং স্থূলতা কমাতে পারে। শুধুমাত্র পানিতে মিশিয়ে খেলে হবে না এর সঠিক ব্যবহার জানতে হবে, চলুন আমরা সবাই ইসবগুল সম্পর্কে বিস্তারিত জানি।

নাম : ইসবগুল ভুসি
বৈজ্ঞানিক নাম : Plantago Ovata
গুণ : Plantago
প্রজাতি : P. Ovata
পরিবার : Plantaginaecae
ইংরেজি নাম : Psyllium husk

প্রাপ্তিস্থানঃ- বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশে ইসবগুলের ভুসি বেশি উৎপাদন হয়, তবে পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও চাষ করা
হয়।

এসিডিটি প্রতিরোধে:- এসিডিটি প্রতিরোধে বেশির ভাগ মানুষ এন্টাসিডসহ বিভিন্ন প্রকার ঔষধ সেবন করেন, তবে এর জন্য ইসবগুলের ভুসি খেয়েছেন কি কখনো? ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার পরপরই এটি আমাদের পাকস্থলির ভেতরে গিয়ে একটি প্রতিরক্ষামূলক ত্বক তৈরী করে যেটি এসিডিটি বাড়া থেকে পাকস্থলীকে রক্ষা করে, এ ছাড়া এটি হজমের জন্য এবং পাকস্থলির বিভিন্ন এসিড নিঃসরণে সহায়তা করে। তাই এসিডিটি কমাতে প্রতিবার খাওয়ার পর দুই চামচ ইসবগুল আধা গ্লাস ঠান্ডা পানিতে অথবা দুধে মিশিয়ে পান করুন। এক্ষেত্রে আপনারা দুধ অথবা পানি একসাথে মিশিয়ে পান করতে পারেন। এটি পাকস্থলীর অত্যধিক এসিড কমাতে সাহায্য করে এবং এসিডিটির মাত্রা কমিয়ে দেয়।

চিকন ও রোগা স্বাস্থ্যকে স্বাস্থ্যবান ও ওজন বাড়াতে:- আপনারা জেনে অবাক হবেন, ইসবগুলের ভুসি ওজন বাড়াতে সাহায্য করে এবং চিকন স্বাস্থ্যকে মোটা করে, এজন্য – ইসবগুলের ভুসি নিয়ম করে প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে এবং রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে দুধের সঙ্গে মিশিয়ে পান করুন। কেননা ইসবগুলের ভুসি হজমে সহায়তা করে এবং খাবারের রুচি বাড়ায়। অর্থাৎ আপনি যদি কম খেতে পারেন, খাবারে রুচি না থাকে হজমের গন্ডগোল হয়, স্বাস্থ্য ভেঙ্গে যায় তাহলে সেটি দূর করবে ইসবগুলের ভুসি।

ওজন কমানোর ক্ষেত্রে:- ওজন কমানোর জন্য ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার একটি বিশেষ পদ্ধতি রয়েছে, এটি নিয়মিত গ্রহণ করলে লম্বা বা দীর্ঘ সময় পেট ভরা থাকবে, ফলে খাবার খাওয়ার ইচ্ছেটা কমে যাবে, সেক্ষেত্রে কুসুম গরম পানিতে দুই চামচ ইসবগুলের ভুসি এবং ১ চামচ লেবুর রস মিশিয়ে ভাত খাওয়ার আগে খেয়ে নিতে হবে অথবা সকালে ঘুম থেকে উঠেও আপনি ২ চামচ ইসবগুলের ভুসি এক গ্লাস উষ্ণ পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে খেলে আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে আসবে এবং দেহের অতিরিক্ত চর্বি থাকবে না। পাকস্থলী পরিষ্কার হবে এবং শরীর থেকে চর্বি ঝড়বে।

কোষ্ঠকাঠিন্যতার ক্ষেত্রে:- কোষ্ঠকাঠিন্য এক দুরূহ রোগ, তবে ইসবগুলের ভুসি মাত্র কয়েকদিনে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে রক্ষা করবে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণে ইসবগুলের ভূসি পাকস্থলীতে গিয়ে ফুলে ভেতরে সব বর্জ্য বাইরে বের করে দিতে সাহায্য করে। প্রাকৃতিকভাবে জলবাহী হওয়ার কারণে পরিপাকতন্ত্র থেকে পানি গ্রহণ করে মলের ঘনত্বকে বাড়িয়ে দিয়ে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে ইসবগুলের ভুসি। কোষ্ঠকাঠিন্য যদি থাকে তাহলে ইসবগুলের ভুসি খেতে হবে রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে এবং খেতে হবে হালকা কুসুম গরম দুধের সাথে মিশিয়ে। কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে ইসবগুলের ভুসি পানিতে মিশিয়ে খেলে ভালো ফল পাওয়া যায় না। এক গ্লাস কুসুম গরম দুধের মধ্যে দুই চা-চামচ ইসবগুলের ভুসি খুব ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে এরপর ১০ মিনিট পর রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে মিক্সিংটা পান করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। এছাড়াও গর্ভজনিত কোষ্ঠকাঠিন্যে কোনোরকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়া ইসবগুলের ভুসি পানিসহ খাওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে ইবনে সিনা ন্যাচারাল ডিভিশনের ইসবগুল খাওয়া যাবে। এছাড়া গর্ভবতী ছাড়া বাকি সবার জন্য ইবনে সিনা ন্যাচারাল ডিভিশনের ইসবগুল প্লাস খেলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।

ডায়রিয়ার ক্ষেত্রে:- অবাক লাগলেও এটি সত্যি ইসবগুলের ভুসি ডায়রিয়াতেও চমকপ্রদ কাজ করে। এক্ষেত্রে ইসবগুলের ভুসি খেতে হবে টক দইয়ের সাথে। অর্থাৎ টক দইয়ের সাথে ইসবগুলের ভুসি মেশালে সত্যিকার অর্থে কি ঘটে? টক দইয়ে থাকা প্রোবায়োটিক
পাকস্থলীর ইনফেকশন সারাতে এবং ইসবগুলের ভুসি তরল মলকে শক্ত করতে সাহায্য করে খুব কম সময়ে। ডায়রিয়ার জন্য ৩ চা-চামচ টক দইয়ের সাথে ২ চা-চামচ ইসবগুলোর ভুসি মিশিয়ে খেয়ে নিতে হবে। এভাবে দিনে ২ বার খেলে ডায়রিয়া দ্রুত প্রতিরোধ হবে।

ডায়াবেটিস প্রতিরোধে:- এটি নিয়মিত পানিসহ পান করলে গ্লুকোজের ভাঙ্গন ও শোষণের গতিকে ধীর বা আস্তে করে, ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রিত থাকে।

হৃদস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে:- এটি উচ্চ আঁশসমৃদ্ধ এবং কম ক্যালরিযুক্ত। এটি রক্তের অতিরিক্ত কোলেস্টেরল কমায়। যার ফলে বহু রোগী ধমনীর ব্লক থেকে রক্ষা পায়।

পাইলস প্রতিরোধে:- প্রাকৃতিকভাবে দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় খাদ্য আঁশে ভরপুর ইসবগুল যারা পায়ুপথে ফাটল এবং পাইলসের মতো বেদনাদায়ক সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য উত্তম। এটা শুধু পেট পরিষ্কার করতেই সাহায্য করে না মলকে নরম করতে সাহায্য করে। অন্ত্রের পানিকে শোষণ করার মাধ্যমে এবং ব্যথামুক্ত অবস্থায় তা দেহ থেকে বের হতেও সাহায্য করে। এটি প্রদাহের ক্ষত সারাতেও
সাহায্য করে। ২ চামচ ইসবগুল কুসুমগরম পানিতে মিশিয়ে ঘুমাতে যাবার আগে পান করুন।

অপকারীতা:- একাধারে বেশি পরিমাণ এবং বেশি দিন ইসবগুলের ভুসি গ্রহণ করলে যে সমস্যাগুলো দেখা দিতে পারে-

  • পেটে ব্যথা,
  • গ্যাস্ট্রাইটিস,
  • বমি বমি ভাব,
  • বমি,
  • এলার্জি/চুলকানি,
  • শ্বাসকষ্ট,
  • অন্ত্রে কোনো প্রকার রোগ থাকলে সমস্যা হতে পারে।

ইসবগুলের ভুসি কেনার সময় কি কি বিষয় দেখে নিবেন
ইসবগুল আমাদের দেশে বাজার থেকে শুরু করে সব সুপার মার্কেটে সব জায়গাতেই সহজলভ্য। সম্প্রতি দেশের সেরা ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো ইসবগুল বাজারে এনেছে। যেমন- ইবনে সিনা, হামদর্দ, স্কয়ার, রেডিয়েন্ট, ইনসেপ্টা, একমি ইত্যাদি। তবে কেনার আগে কিছু ব্যাপার অবশ্যই খেয়াল রাখবেন- প্যাকেটজাত ইসবগুল কিনুন। কখনোই খোলা ইসবগুল কিনবেন না সেগুলো নষ্ট ও ভেজাল থাকতে পারে যার ফলে এটি খেয়ে হয়তো ভালো ফলাফল নাও পেতে পারেন। আজকাল প্যাকেটজাত বিভিন্ন ধরনের কৃত্রিম স্বাদের ইসবগুল পাওয়া যায়। তবে ভালো ফলাফল পেতে এসব কৃত্রিম স্বাধের ইসবগুল না খেয়ে সাধারণ ইসবগুল খান। বিভিন্ন দোকানে সাধারণ ইসবগুলে কৃত্রিম স্বাদ ও রঙ যোগ করে বিশেষ কার্যকারিতার কথা বলে তা বিক্রয় করা হয়। যা মূলত স্বাস্থ্যের জন্য খুবই খারাপ। তাই সাধারণ ইসবগুল খাওয়াই সবচেয়ে উত্তম।

Esobguler Joto Bebohar

ভালো লাগলে কিন্তু ফেসবুক পেজ এ লাইক দিতে ভুলে জাবেন না।
আরো সাস্থ্য সম্পর্কে জানতে ভিজিট করুন.