Gulencor Owshodhi Gun

Gulencor Owshodhi Gun

বাংলা নাম : গুলঞ্চ
সংস্কৃত নাম : গুরুচী
ফারসী নাম : গেলু
হিন্দী নাম : গুরুচ
ইংরেজি নাম : Moon Creaper
বৈজ্ঞানিক নাম : Tinospora cordifolia
প্রাপ্তিস্থান : বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, চীন, ভারত, মিয়ানমার এবং দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশেও পাওয়া যায়।

গুল্মটি অন্য গাছের ওপরে বেয়ে ওঠা দীর্ঘ লতা উদ্ভিদ। পাতা পানপাতার মতো হৃদয়াকৃতির এবং লম্বা বোঁটাযুক্ত। লম্বা সুতার মতো অসংখ্য বায়বীয় মূল যা ঝুলন্ত কান্ড থেকে মাটি পর্যন্ত বিস্তৃত। কান্ডে পদ্মকাঁটার মতো গুটি থাকে। কান্ডের উপরিভাগ খসখসে ফাটলযুক্ত। ছালের বর্ণ সবুজ, ভেতরে সাদা। এই গাছে গ্রীষ্মকালে ফুল ফোটে এবং শীতকালে ফল পাকে। ফল পাকলে লাল বর্ণের হয়।

স্বাদে তিক্ত। গুলঞ্চ থেকে আহরিত শ্বেতসারকে ইউনানী চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় সত্তে গেলু বলে, যা বিভিন্ন ইউনানী ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও নিমগাছে বেড়ে উঠা গুলঞ্চের কার্যকারিতা বেশি বলে বিবেচনা করা হয়। প্রাচীনকাল থেকে ইউনানী চিকিৎসকগণ সব প্রকার জ্বর নিরাময়ে সফলতার সাথে গুলঞ্চ ব্যবহার করছেন।

গুলঞ্চে আছে আঁশ (১৫-১৯%), প্রোটিন (৩.১%) এবং প্রতি ১০০ গ্রামে ২৯২.৫৪ ক্যালরি পুষ্টি শক্তি। আরো আছে নানারকম রাসায়নিক পদার্থ যেমন জিঙ্ক, ম্যাঙ্গানিজ, ফ্লোরিন, ক্যালশিয়াম, টাইটানিয়াম, ক্রমিয়াম, আয়রন, কোবাল্ট, নিকেল, কপার, ব্রমিন, স্ট্রোনশিয়াম এবং পটাশিয়াম। এছাড়াও এলকালয়েড, ডিটারপিনয়াড, ল্যাকটোনস, স্টেরয়েডস, গ্লাইকোসাইডস, এলিফ্যাটিক যৌগ এবং পলিসাকারাইড আছে।

রোগ নিরাময়ে ব্যবহার:-
জ্বর নিরাময়ে:- বহুদিনের না সারা জ্বর বা ক্রনিক ফিভার যদি থেকে থাকে তবে এই গাছের পাতা কেটে নিয়ে তা কাঁচা খেলে অথবা কান্ড ১০ গ্রামের মতো নিয়ে পিষে পানির সাথে মিশিয়ে ছেঁকে নিয়ে অল্প গরম করে খেলেও চমৎকার কাজ হয়। ডেঙ্গুর প্রাথমিক উপসর্গ ঠেকাতে গুলঞ্চের রস উপকারী। ফলিত গবেষণার একটি আন্তর্জাতিক পত্রিকায় প্রকাশিত এক রোগিনীর কথা বলা হয়েছে যাকে ১৫ দিন দিনে দু’বার করে ৪০ সষ গুলঞ্চের রস খাওয়ানো হয়েছিল। ১৫ দিন পর রোগিনীকে পরীক্ষা করে দেখা যায় তাঁর প্লাটিলেট সংখ্যা বেড়েছে, জ্বর এবং র‍্যাশ কমেছে। তেমন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া চোখে পড়েনি। সংখ্যায় কম প্লাটিলেট বহনকারী ২০০ জন রোগীর ওপর আরও একটি সমীক্ষা করা হয়েছিল, যেখানে রোগীদের ৫ দিন পেঁপে এবং গুলঞ্চ পাতা ছেঁচে তার রসের ৫ সষ করে মিশ্রণ খাওয়ানো হয়। সমস্ত রোগীদের মধ্যে প্লাটিলেট সংখ্যার উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখা দিয়েছিল।

Gulencor Owshodhi Gun

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে:-
সুপ্রাচীন কাল থেকে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গুলঞ্চ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার হয়ে আসছে। গুলঞ্চের ডায়াবেটিস প্রতিরোধী ক্ষমতা প্রমাণে প্রাণীদের ওপর এবং পরীক্ষাগারে প্রচুর গবেষণা করা হয়েছে। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, এতে শর্করা নিয়ন্ত্রণে গুলঞ্চ বা টিনোস্পোরা যথেষ্ট কার্যকরী।

আরও বলা হয়েছে, এই গুল্মটি ইনসুলিনের ক্ষমতা বাড়িয়ে এবং শরীরে অক্সিডেটিভ হাইপোগদ্বাইসেমিক প্রভাব বিস্তার করে। চাপ কমিয়ে এর এছাড়া, গ্লুকোজের বিপাকীয় প্রক্রিয়ার (গ্লুকোনিওজেনেসিস এবং গকোজেনোলাইসিস) জটিল পর্যায়ে হস্তক্ষেপ করে এবং তার ফলে সার্বিকভাবে রক্তে শর্করার সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল রিসার্চ মাত্রা কমে।

ভারতের কাউন্সিল ফর (CSIR) এবং ন্যাশনাল বোটানিক্যাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট ইন ইন্ডিয়া যৌথভাবে একটি পলিহার্বাল ট্যাবলেট পণ্য (একটির বেশি গুল্মের সমন্বয়ে তৈরি) বাজারজাত করছেন যার অন্যতম একটি উপাদান হচ্ছে গুলঞ্চ। CSIR জানিয়েছে অন্যান্য ডায়াবেটিস প্রতিরোধী ওষুধের যেসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে এতে তা নেই ।

ওজন কমাতে:- গুলঞ্চ হাইপোলিপিডেমিক হিসেবে কাজ করে বিধায় নিয়মিত কিছু দিন সেবনে ওজন কমাতে চমৎকার কাজ করে। গুলঞ্চ উৎকৃষ্ট ইমিউনোমডুলেটরি অর্থাৎ যা আপনার প্রতিরোধ ক্ষমতাকে উজ্জীবিত করে যাতে আপনি আরও সক্রিয়ভাবে কাজ করেতে পারেন।

গেঁটেবাত নিরাময়ে:- গুলঞ্চ পাতা এবং কিছু ডাল কেটে সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে দিন। পরের দিন সকালে এগুলো গুঁড়িয়ে নিয়ে ১ গ্লাস পানিতে সিদ্ধ করতে দিন। পানির পরিমাণ অর্ধেক হয়ে গেলে ছেঁকে নিয়ে পান করুন। এভাবে খেতে না চাইলে গুলঞ্চের রস কিংবা গুলঞ্চের গুঁড়ো করেও খেতে পারেন।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে:- শরীরের শ্বেত রক্তকণিকারা শরীরে কোনো জীবাণু ঢুকলে আক্ষরিক অর্থে তাকে গিলে নেয়। এই পদ্ধতিকে বলে ‘ফ্যাগোসাইটোসিস’। গুলঞ্চ এই ফ্যাগোসাইটোসিস পদ্ধতির হারকে বাড়ায় এবং সিরাম অ্যান্টিবডির পরিমাণকে বাড়ায়। এটি জ্বরের পশমকারী পথ্য হিসেবে ব্যবহার হয়।

বমি বমি ভাব ও বমি হলে:- গুলঞ্চ লতা বেটে ঠান্ডা পানিতে ৫-৬ ঘণ্টা পর্যন্ত ভিজিয়ে রাখার পর ওই পানি ছেঁকে অল্প অল্প পান করলে বমি বমি ভাব দূর হয়।

প্লীহা বড় হলে:- গুলঞ্চের রস দুই সপ্তাহ সেবন করলে প্লীহা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।

কৃমি হলে:- আধা তোলা পরিমাণ গুলঞ্চের রস গরম পানিসহ সেবন করলে বিশেষ সুফল পাওয়া যায়।

দীর্ঘদিন রোগে শারীরিক দূর্বলতায়:- গুলঞ্চের রস এক তোলা, গরুর ঘি এক তোলা, পুরাতন গুড় এক তোলা, মধু ও দুধসহ সেবন করলে বিশেষ সুফল পাওয়া যায়। গুলঞ্চ উৎকৃষ্ট ইমিউনোমডুলেটরি অর্থাৎ যা আপনার প্রতিরোধ ক্ষমতাকে উজ্জীবিত করে যাতে আপনি আরও সক্রিয়ভাবে কাজ করেতে পারেন।

সুতরাং আপনি যদি কোনো অটোইমিউন রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে গুলঞ্চ সেবনের আগে আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়া শ্রেয়। গর্ভাবস্থায় ও স্তন্যদানকালে এর ব্যবহার সম্পর্কে তেমন কোনো তথ্য জানা যায়নি। তাই এ সময় গুলঞ্চ ব্যবহারে সতর্ক থাকা উচিত। রোগ নিরাময়ে রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী গুলঞ্চ ব্যবহার করা উত্তম।

গুলঞ্চ দিয়ে তৈরি ইউনানী ওষুধ:- সফুফ সত্তে গেলু, হাব্বে হুম্মা, হাব্বে বোখার, আরক বোখার।

Gulencor Owshodhi Gun

ভালো লাগলে কিন্তু ফেসবুক পেজ এ লাইক দিতে ভুলে জাবেন না।
আরো সাস্থ্য সম্পর্কে জানতে ভিজিট করুন.